পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

দেওয়া হইয়াছিল?” এইরূপে অগ্রজ মহাশয়ের দ্বারা সকল আপত্তি খণ্ডিত হইয়াছিল। তাঁহার মত এই যে, শূদ্রসন্তানেরা ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার ও দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করিতে পারিবেন, শাস্ত্রের কোনও স্থানে ইহার বাধা নাই। কেবল ধর্মশাস্ত্র স্মৃতি অধ্যয়ন করিতে পারিবেন না। তজ্জন্য শূদ্রগণের স্মৃতির শ্রেণীতে অধ্যয়ন রহিত হইয়াছে। তদবধি শূদ্রজাতীয় সন্তানগণ সংস্কৃতকলেজে প্রবিষ্ট হইয়া, সংস্কৃত ভাষা অবাধে শিক্ষা করিয়া আসিতেছেন। শূদ্রেরা যে সংস্কৃত অধ্যয়ন করিতেছেন, কেবল বিদ্যাসাগর মহাশয়ই ইহার প্রধান উদ্যোগী; ইঁহার যত্নে ও আগ্রহাতিশয়েই শূদ্রগণের সংস্কৃতশিক্ষা প্রচলিত হইয়াছে এবং ইহাতে দেশের বিশেষ উপকার সাধিত হইতেছে।

 তৎকালে সংস্কৃত-কলেজে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্যজাতির সন্তানেরা বিনা বেতনে অধ্যয়ন করিত। বেতন না লইয়া শিক্ষা দেওয়ায়, সাহেবদের নিকট বিদ্যালয়ের গৌরব থাকে না। একারণ, তিনি, অতঃপর ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও শূদ্রের যে সকল নূতন বালক অধ্যয়নার্থ আসিত, তাহাদের নিকট হইতে মাসিক বেতন আদায়ের ব্যবস্থা করিয়া দিলেন।

 সাহিত্যশাস্ত্র অধ্যয়ন করিতে হইলে, অগ্রে সংস্কৃত-ব্যাকরণ শিক্ষা করা অত্যাবশ্যক, নচেৎ সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি লাভ হয় না। অনেক কৃতবিদ্য বিচক্ষণ বিষয়ী লোক, সংস্কৃত-ভাষা শিখিতে ইচ্ছা করিয়া থাকেন; কিন্তু ব্যাকরণে অজ্ঞতাপ্রযুক্ত সংস্কৃত অধ্যয়নে বঞ্চিত হইয়াছেন। অধ্যাপকগণ সুকুমারমতি শিশুগণকে ব্যাকরণের যাহা উপদেশ প্রদান করিতেন, বালকগণ তাহা কণ্ঠস্থ করিয়া রাখিত, কোন বালকই ভালরূপ বুঝিতে পারিত না। শুকপক্ষীকে লোকে যেমন রাধাকৃষ্ণ পাঠ শিক্ষা দেয়, অনেকবার শিক্ষা দেওয়ায় বনের পক্ষীও যেমন ঐ নাম বলিতে পারে; কিন্তু রাধাকৃষ্ণ যে কি পদার্থ তাহা তাহার কখনই বোধগম্য হয় না; ব্যাকরণেও তাহাদের সেইরূপ বুৎপত্তি জন্মিত।

 সন ১২৫৮ সালের ১লা অগ্রহায়ণ অগ্রজ মহাশয়, অল্পবয়স্ক বালকগণের আশু সংস্কৃত-ভাষার অধ্যয়নের সৌকর্য্যার্থে ব্যাকরণের উপক্রমণিকা নামক