পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরি
৯৫

ইহা জানিয়া অন্যান্য ধনশালী লোকেরা আশ্চর্য্য়ান্বিত হইতেন যে, যিনি এতাদৃশ প্রচুর অর্থ দান করেন, তাঁহার গোপনে দান করিবার কারণ কি? আমরা যাহা দান করি, তাহা সকলকেই প্রকাশ করিয়া থাকি। একদিবস একটি ভদ্রলোক, তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, “মহাশয়! গোপনে দান করিবার তাৎপর্য কি?” তিনি উত্তর করেন যে, “লোকের সমক্ষে দিলে লইতে যদি লজ্জিত হয়, এজন্য গোপনভাবে দেওয়া হয়। যাহারা প্রকাশ্যে দান করেন, তাঁহারা লোকের নিকট প্রতিষ্ঠালাভের অভিপ্রায়ে করিয়া থাকেন। আমি সর্ব্বসমক্ষে কাহাকেও দান করি না; লোকের কষ্ট দেখিলেই দিয়া থাকি। নামে আমার আবশ্যক নাই।”

 ঐ বৎসর আশ্বিন মাসে অগ্রজ মহাশয় বাটীতে থাকিয়া দেখিলেন, কনিষ্ঠ সহোদর ঈশান ও তাঁহার পুত্র নারায়ণকে পিতৃদেব অত্যন্ত আদর করেন; তদ্দর্শনে পরিহাসপূর্ব্বক পিতৃদেবকে বলিলেন, “আপনি ঈশানের ও নারায়ণের মাথা খাইতেছেন, তথাপি আপনি লোকের নিকট আপনাকে কিরূপে নিরামিষাশী বলিয়া পরিচয় দেন?”

 তৎকালে সংস্কৃত-কলেজে কেবল ব্রাহ্মণ ও বৈদ্যজাতীয় সন্তানগণ অধ্যয়ন করিত। ব্রাহ্মণের সন্তানেরা সকল শ্রেণীতেই অধ্যয়ন করিত; বৈদ্যজাতীয় বালকেরা দর্শন-শাস্ত্র পর্য্য়ন্ত অধ্যয়ন করিতে পাইত, বেদান্ত ও ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করিতে পাইত না। শূদ্র-বালকের পক্ষে সংস্কৃত-কলেজে অধ্যয়ন নিষেধ ছিল। অগ্রজ মহাশয়, প্রিন্সিপাল হইয়া, শিক্ষাসমাজে রিপোর্ট করিলেন যে, হিন্দুমাত্রেই সংস্কৃত-কলেজে অধ্যয়ন করিতে পারিবে। শিক্ষাসমাজ রিপোর্টে সন্তুষ্ট হইয়া, তাহার প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। ইহা শ্রবণ করিয়া, ব্রাহ্মণের আপত্তি করিলেন যে, “শূদ্রের সন্তানেরা সংস্কৃত-ভাষা কদাচ শিক্ষা করিতে পাইবে না।” তাহাতে অগ্রজ মহাশয় বলিয়াছিলেন যে, “পণ্ডিতেরা” তবে কেমন করিয়া সাহেবদিগকে সংস্কৃত শিক্ষা দিয়া থাকেন? আর সভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব শূদ্রবংশোদ্ভব, তবে তাঁহাকে কি কারণে সংস্কৃত-শিক্ষা