পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কার্য্য হন। তদবধি বাঙ্গালাদেশে ঐ দৃষ্টান্তে ক্রমশঃ গ্রীষ্মবকাশ প্রবর্তিত হইয়াছে।

 অগ্রজ মহাশয় ১২৫৯ সালের গ্রীষ্মবকাশে কলিকাতা হইতে যাত্রা করিয়া, পদব্রজে ৬ ক্রোশ অন্তর চণ্ডীতলা গ্রামের এক পান্থনিবাসে রাত্রিযাপনপূর্ব্বক, পরদিবস পদব্রজেই তথা হইতে ২০ ক্রোশ অন্তর বীরসিংহায় নিজ বাটীতে পঁহুছিয়াই, পিতা মাতা ভাই ভগিনী ও প্রতিবেশী বন্ধুবর্গের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন।

 পর দিবস হইতে গ্রামস্থ নিরুপায়দিগকে বিবেচনামত কিছু কিছু দিয়া সাহায্য করিতে লাগিলেন; ইহা দেখিয়া গ্রামের ও পার্শ্ববর্ত্তী গ্রামের অনেকে ইঁহাকে ধনশালী বলিয়া স্থির করিলেন। বোধ হয়, এই কারণেই গ্রামস্থ ব্যক্তিদের যোগে ৩০শে বৈশাখ আমাদের বাটীতে ডাকাইতি হয়। ঐ দিবস আমরা রাত্রি নয়টার পর ভোজনান্তে অন্তঃপুরে শয়ন করিয়াছি, সদর-বাটীতে প্রায় ৩০ জন পুরুষ নিদ্রা যাইতেছিলেন, এতদ্ব্যতীত দুই জন গ্রাম্য-চৌকিদারও জাগরিত ছিল। নিশীথসময়ে বাটীর সম্মুখে প্রায় ৪০ জন লোক ভয়ানক চীৎকার করিয়া উঠিল; ঐ চীৎকার-শ্রবণে আমাদের সকলেরই নিদ্রাভঙ্গ হইল। তখন, ডাকাইতগণ মশাল জ্বলিয়া মধ্যদ্বার ভাঙ্গিতেছিল, তদ্দর্শনে দাদা অত্যন্ত ভীত হইলেন। আমরা অলক্ষিতভাবে খিড়কির দ্বার দিয়া, তাঁহাকে লইয়া বাটী হইতে প্রস্থান করি। দস্যুগণ, অগ্রজকে ধরিতে পারিলে, টাকার জন্য বিলক্ষণ যাতনা দিত। অনন্তর দস্যুগণ যথাসর্বস্ব লুঠিয়া লইয়া প্রস্থান করিল। রাত্রিতেই ঘাঁটাল-থানার দারোগাকে সংবাদ দেওয়ায়, তিনি পরদিন প্রাতে পঁহুছিয়া, পুলিশকর্মচারিদের প্রথানুসারে গোলমাল করায়, পিতৃদেব বলিলেন, “আপনি কুলীন-ব্রাহ্মণের ছেলে বলিয়া আপনার মর্য্য়াদা রাখিতে পারি, কিন্তু এ সম্বন্ধে আপনাকে কিছু দিতে পারি না।” অনন্তর পিতৃদেব, পরিবারবর্গের কাহারও দ্বিতীয় বস্ত্র না থাকায় ও ঘটী, বাটী, থালা ইত্যাদি কিছুমাত্র না থাকায়, ঐ সকল দ্রব্য ক্রয় করিবার জন্য উদয়গঞ্জ ও