পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

প্রায় শতাধিক বালক অধ্যয়নার্থ প্রবিষ্ট হইল। ক্রমশঃ সন্নিহিত গ্রাম পাথরা, উদয়গঞ্জ, কুরাণ, গোপীনাথপুর, যদুপুর, দণ্ডীপুর, ঈড়পালা, দীর্ঘগ্রাম, সাততেঁতুল, আমড়াপাট, পুড়শুড়ী, মাম্‌রুল, আকপপুর, আগর, রাধানগর ক্ষীরপাই প্রভৃতি গ্রাম হইতে যথেষ্ট বালক বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইতে লাগিল। পাঠ্যপুস্তক ক্রয় করে, অনেকেরই এমন সঙ্গতি ছিল না। বিদ্যালয় অবৈতনিক হইল। অগ্রজ মহাশয়, কলিকাতা হইতে প্রায় ৩০০ তিন শতের অধিক বালকের জন্য পাঠ্যপুস্তক এবং কাগজ, শ্লেট প্রভৃতি অকাতরে প্রেরণ করিতেন। স্বগ্রামের যে যে ছাত্রের বস্তাভাব ছিল, তাহাদিগকে বস্ত্র ক্রয় করিয়া দিবার জন্য, আমাকে আদেশ দেন। ঐ সময়ে বিদেশস্থ অনেক অধ্যাপকের পুত্র, অধ্যয়ন-মানসে সমাগত হন।

 যাহারা অন্যের বাটীতে বেতন গ্রহণ করিয়া দিবসে গরু চরাইত, বা যাহারা দিবসে কৃষিকর্ম্ম করিত, তাহাদের লেখাপড়া শিক্ষার জন্য নাইট্‌-স্কুল স্থাপন করিলেন। ঐ স্কুলে সন্ধ্যার পর রাত্রি দুই প্রহর পর্যন্ত দুইজন শিক্ষক নিযুক্ত ছিলেন; বিনামূল্যে পুস্তক দিতে হইত, এই সকল বিষয়ে যা ব্যয় হইত, তাহা অগ্রজ মহাশয় স্বয়ং নির্ব্বাহ করিতেন। ঐ সময়ে এ প্রদেশে ডাক্তারি চিকিৎসার প্রচলন ছিল না। অগ্রজ মহাশয়, দেশস্থ লোকের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করিয়া, দাতব্যচিকিৎসালয় স্থাপন করেন। সকলেই বিনামূল্যে ঔষধ পাইত। বীরসিংহা, বোয়ালিয়া, পাথরা, মামুদপুর প্রভৃতি সন্নিহিত গ্রামে কাহারও বাটীতে চিকিৎসা করিতে হইলে, পদব্রজে যাইয়া বিনা ভিজিটে চিকিৎসা করিবার ব্যবস্থা ছিল। এতদ্ব্যতীত দুঃস্থ লোকের পথ্যের জন্য সাগু, বাতাসা, মিছরি প্রভৃতি দেওয়া হইত।

 তৎকালে এ প্রদেশের স্ত্রীলোকেরা লেখাপড়া শিক্ষা করিত না। বীরসিংহায় সর্ব্বাগ্রে বালিকাবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। সকল বালিকাই বিনামূল্যে পুস্তক পাইত। যৎকালে কলিকাতায় প্রথম বেথুন-ফিমেল-স্কুল স্থাপিত হয়, তৎকালে কলিকাতাবাসী সন্ত্রান্ত দলপতিগণ ও অন্যান্য সম্ভ্রান্ত লোকেরা নানা-