পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কলেজে সামান্য-বেতনে শিক্ষকতাকার্য্য়ে নিযুক্ত হইতে হয়। দুরদেশে, স্বল্পবেতনে কয়েক বৎসর অবস্থিতি করিয়া, পরিশেষে বিনা অনুমতিতে ঢাকা- কলেজ হইতে প্রস্থান করেন; এজন্য শিক্ষাসমাজ প্রসন্নবাবুকে আর কোন কর্ম্ম না দেওয়ায়, অগত্যা প্রসন্নবাবু, অগ্রজ মহাশয়ের শরণ লইলেন। পরম- দয়ালু অগ্রজ মহাশয়, প্রসন্নবাবু এবং উহাঁর ভ্রাতৃবর্গ ও তাঁহার কনিষ্ঠ পিতৃব্যকে প্রায় দুই বৎসর কাল বহুবাজারের পঞ্চাননতলায় নিজ বাসায় রাখিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহারা নিজব্যয়ে আহারাদি করিতেন। অগ্রজ মহাশয়, এডুকেসন কৌন্‌সেলের সেক্রেটারি ময়েট্‌ সাহেব মহাশয়কে অনুরোধ করিয়া, প্রসন্নবাবুকে প্রথমতঃ হিন্দুকলেজের নিম্নশ্রেণীর শিক্ষক নিযুক্ত করান। প্রসন্নবাবু স্বল্প-বেতনে কর্ম্ম করিতে প্রথমতঃ অসম্মত হইয়াছিলেন; কারণ, এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিয়াই মাসিক ৪০৲ টাকা বৃত্তি পাইয়াছিলেন; এক্ষণে ঐ বিদ্যালয়ে স্বল্প-বেতনে নিম্ন-শ্রেণীর কর্ম্ম করিতে লজ্জা বোধ হইল। ইহা প্রকাশ করিলে পর, অগ্রজ তাঁহাকে উপদেশ দিলেন যে, তুমি না বলিয়া ঢাকা কলেজ হইতে আসায়, শিক্ষাসমাজ তোমার প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াছেন। এক্ষণে এই কর্ম্ম করিতে স্বীকার না পাইলে, অপরাধী বলিয়া তোমাকে কোন ভাল কর্ম্মে নিযুক্ত করিবেন না। এইরূপ উপদেশ দেওয়ায়, তিনি উক্ত কার্য্য়-গ্রহণে স্বীকৃত হইয়া ত্বরায় ঐ কর্ম্মে প্রবৃত্ত হইলেন।

 প্রসন্নবাবু, অগ্রজের অনুরোধে চারিটার ছুটীর পর, কয়েক মাস সংস্কৃত- কলেজে তৎকালের প্রধান ছাত্র রামকমল, তারাশঙ্কর, সোমনাথ, সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় প্রভৃতিকে ইংরাজী শিক্ষা দিতেন, এবং স্বয়ং প্রতিদিন প্রাতঃকালে অগ্রজ মহাশয়ের নিকট সংস্কৃত বিষ্ণুপুরাণ, রঘুবংশ প্রভৃতি অধ্যয়ন করিতেন। দাদাও সময়ে সময়ে প্রসন্নবাবুর নিকট ইংরাজী পুস্তক দেখিতেন। প্রসন্নবাবু অতিশয় বুদ্ধিমান্ ও কার্য্য়দক্ষ লোক ছিলেন। একমাত্র অগ্রজ মহাশয়ের চেষ্টাই ইহাঁর ভবিষ্যৎ উন্নতির মূল। তাঁহার অনুগ্রহেই প্রসন্নবাবু ক্রমশঃ উচ্চপদে অধিরূঢ় হইয়াছিলেন। প্রথমতঃ সংস্কৃত-কলেজে ১০০৲ টাকা