পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিধবাবিবাহ।
১২৭

আবেদন করিয়াছিলে, এবং তাহাতেই বিধবাবিবাহ বিধিবদ্ধ হইয়াছে, ইহা শুনিয়া আমি পরম সন্তোষ লাভ করিয়াছি। ভবিষ্যতে যে বিধবাবিবাহ প্রচলিত হইবে, তুমি তাহার পথ পরিষ্কার করিয়া দিয়াছ। পরন্তু, যিনি এ বিষয়ের ব্যবস্থা দিবেন, এবং যিনি ইহা আইনবদ্ধ করাইবেন, তাঁহাকেই যে বিধবাবিবাহ দেওয়াইতে হইবে, এমন কথা নয়। এ সকল বহুব্যয়সাধ্য কর্ম্ম; তোমার টাকা কোথায়? কোনও কারণে কর্ম্মচ্যুত হইলে, কি উপায়ে দিনপাত করিবে? ইহা ধনশালী লোকদের কার্য্য়। বরং, আমার বিবেচনায় কিছুকাল মফঃস্বলে পরিভ্রমণ করিয়া, রাজা ও সম্রান্ত জমিদারদিগকে স্বমতে আনয়ন-পূর্ব্বক এই গুরুতর কার্য্য়ে প্রবৃত্ত হও। অন্যথা, কলিকাতাবাসী অল্পবয়স্ক, অপরিণামদর্শী ও অব্যবস্থিতচিত্ত যুবকবৃন্দের কথায় নির্ভর করিয়া, এই গুরুতর কার্য্যে হস্তক্ষেপ করা উচিত নহে।” পূজ্যপাদ তর্কবাগীশ মহাশয়ের এই কথা শুনিয়া, অগ্রজ বলিলেন, “মহাশয়, উৎসাহ ভঙ্গ করিবেন না। আমি কখনই পশ্চাৎপদ হইব না।” তাঁহার বাক্য-শ্রবণে তর্কবাগীশ মহাশয় বলিলেন, “অগ্রে টাকার যোগাড় ও মফঃস্বলবাসী রাজা ও জমিদারগণকে স্বমতে আনয়ন-পূর্ব্বক একার্য্য়ে প্রবৃত্ত হওয়া উচিত ছিল; একথা আমি তোমাকে বারম্বার বলিতেছি।” ইহা বলিয়া তর্কবাগীশ মহাশয় প্রস্থান করেন।

 এস্থলে নিম্নলিখিত গল্পটি না লিখিয়া ক্ষান্ত থাকিতে পারিলাম না। তর্কবাগীশ মহাশয়ের পূর্ব্বপুরুষের রচিত সাহিত্যদর্পণের হস্তলিখিত টীকাসমেত পুঁথিটী অতি জীর্ণ হইয়াছিল; একারণ, ছাত্রগণকে বলিয়াছিলেন যে, “তোমরা ক্লাশে বসিয়া এই আদর্শ দেখিয়া, অন্য পুস্তক লিখিবে, কেহ বাটী লইয়া যাইও না; যেহেতু জীর্ণপুস্তক, অনায়াসেই নষ্ট হইতে পারে বা দৈবাৎ তৈল পড়িয়া পাতার অক্ষর অস্পষ্ট হইতে পারে।” তজ্জন্য সকলেই ক্লাশে বসিয়া লিখিত। কিন্তু এক দিবস অগ্রজ মনে করিলেন, এখানে লেখায় অনেক সময় নষ্ট হয়। বাটীতে লিখিলে, এক রাত্রেই অনেক লেখা হইবে; এইরূপ মনে করিয়া