পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

গোপনে কতকগুলি পাতা লইয়া যাইতেছিলেন। বর্ষাকাল, ছাতা নাই, পথে ভিজিতে ভিজিতে যাইতেছেন; হঠাৎ পড়িয়া গিয়া, পরিধান-বস্ত্রাদি এবং প্রাচীন পুঁথির পাতাগুলি ভিজিয়া গেল। তাহা দেখিয়া, দাদা রোদন করিতে লাগিলেন। পরে মনে মনে ভাবিলেন যে, গুরুর বাক্য অবহেলন করিয়া এই বিপদে পড়িলাম। কোন সদুপায় স্থির করিতে না পারিয়া, রোদনে প্রবৃত্ত হইলেন। অবশেষে এক ব্যক্তি বলিল, “কান্না কেন, সম্মুখে এই ভুনারীর দোকানে পুঁথির পাতাগুলি অগ্নিতে সেক, তাহা হইলে শুকাইরে।” তাহার পরামর্শানুসারে ঐরূপ করিতেছেন, এমন সময়ে, তর্কবাগীশ মহাশয়, ঐ পথ দিয়া যাইতেছিলেন। তিনি অগ্রজকে ভুনারীর দোকানে ঐরূপ অবস্থাপন্ন দেখিয়া বলিলেন, “ঈশ্বর! এখানে কি করিতেছ?” তর্কবাগীশ মহাশয়কে দেখিয়া, ভয়ে কোন কথা বলিতে না পারিয়া, মাথা চুল্‌কাইতে লাগিলেন। তাঁহার আর্দ্র বস্তু দেখিয়া, তর্কবাগীশ মহাশয় নিজের উড়ানি পরিধান করিতে দিলেন, এবং বলিলেন, “পুঁথির পাতের জন্য তোমার কোন চিন্তা নাই।” অনন্তর একখানি গাড়ী ভাড়া করিয়া, তাঁহাকে বড়বাজারের বাসায় পঁহুছাইয়া দিলেন।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় এরূপ শ্রদ্ধাস্পদ পণ্ডিত মহাশয়ের কথা রক্ষা না করিয়া, নিজের জীদ্‌ বজায় রাখিয়া, শ্রীশবাবুর বিবাহের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন।

 তৎকালে বঙ্গদেশের অনেকেই বলিত যে, বিদ্যাসাগর মহাশ আন্তরিক যত্নের সহিত পরিশ্রমপূর্ব্বক ধর্ম্মশাস্ত্র সকল আদ্যন্ত অবলোকন করিয়া, বিধবাবিবাহ যে শাস্ত্রসম্মত ইহা প্রমাণ করিয়া বঙ্গদেশের সকল পণ্ডিতকে পরাজয় করিয়াছেন এবং রাজদ্বারে আবেদন করিয়া, বিধবাবিবাহের আইন পাশ করাইয়াছেন; কিন্তু অদ্দ্যাপি একটিও বিধবার বিবাহ দিতে পারিলেন না। অগ্রে একটী বিধবার বিরাহকার্য্য সমাধা হইলে, দেখিয়া শুনিয়া অনেকেই বিধবা-কন্যার বিবাহ দিবেন। কিছু দিন সর্ব্বত্র সকল সময়ে এই কথারই আন্দোলন হইতে লাগিল।