পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

না। তাঁহার উদ্যম একবার ভঙ্গ হইলে, ক্ষণমাত্রও বিচলিত হইতেন না; বরং দ্বিগুণ উৎসাহের সহিত কার্য্যে প্রবৃত্ত হইতেন। কিছুদিন পরে পুনর্ব্বার চেষ্টা করিলেন। সেই সময়ে বিদ্যালয়সমূহের কর্তৃপক্ষ সাহেবেরা অহঙ্কারপূর্ব্বক বলেন যে, “বাঙ্গালীদের ইংরাজী কলেজ চালাইবার এখনও ক্ষমতা হয় নাই। ইংরাজ ভিন্ন ইংরাজী-কলেজ পরিচালনা অসম্ভব।” অগ্রজ, তাঁহাদের এই সাহঙ্কার-বাক্য অগ্রাহ্য করিয়া, তর্ক-বিতর্ক দ্বারা নানা প্রকার বাধা অতিক্রমপূর্ব্বক, নিজ কলেজে সমস্ত দেশীয় শিক্ষক নিযুক্ত করতঃ ভারতবাসীদের মধ্যে সর্ব্বপ্রথমে কলেজ-ক্লাস খুলিলেন। এই কলেজ লইয়া, ই, সি বেলির সহিত তাঁহার অনেক কথাবার্ত্তা হয়। ই, সি, বেলি বলেন, “বিদ্যাসাগর! কিরূপে তুমি নিজ কলেজ চালাইবে? ইংরাজ-সাহায্য ব্যতীত ইংরাজী-কলেজ কিছুতেই চলিতে পারে না।” অগ্রজ, তাঁহাকে উত্তর করেন, “আমি আপন বিদ্যালয়ের ছাত্রবর্গকে ইংরাজী-বিদ্যা শিখাইতে না পারিলেও পাশ করাইতে পারিব, ইহা নিশ্চয় জানিবেন।” ১৮৭২ খৃষ্টাব্দে এল,এ ক্লাসের এফিলিয়েসন্ মঞ্জুর হয়, এবং সেই বৎসর হইতে এল,এ পরীক্ষার্থীদিগের রীতিমত পড়াশুনা আরম্ভ হয়। এই সময়ে অগ্রজ মহাশয় কায়িক অত্যন্ত অসুস্থ হইয়াছিলেন। ১৮৭৬ খৃঃ অব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে, অগ্রজ মহাশয়ের তৃতীয় জামাতা বাবু সূর্য্যকুমার অধিকারী, কলেজ এবং স্কুলের সেক্রেটারির পদে নিযুক্ত হইয়া, আয় ও ব্যয়ের উত্তম বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন।

 ১৮৭৯ খৃঃ অব্দে বি,এ ক্লাস খোলা হয়। বৎসর বৎসর বি,এ পরীক্ষার্থীদিগের সংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল; এমন কি, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বৎসর ২৫০টি ছাত্র বি,এ পাশ হয়, সেই বৎসর ঐ ২৫০ জনের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এই এক মেট্রোপলিটান হইতে এবং বাকী দুই-তৃতীয়াংশ কলিকাতার বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য যাবতীয় বিদ্যালয় হইতে পাশ হইয়াছিল। তদ্দর্শনে অগ্রজ মহাশয়, প্রোৎসাহিত হইয়া ল-ক্লাস খুলিবার জন্য যত্নবান হন,