পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

 সন ১২৬৫ সালের অগ্রহায়ণ মাসের শেষে পিতামহীর আসন্নকাল উপস্থিত দেখিয়া, বীরসিংহা হইতে তাঁহাকে গঙ্গাযাত্রা করান হয়। তিনি শালিখায় গঙ্গাতীরে, বিনা আহারে, কেবল গঙ্গাজল পান করিয়া, কুড়ি দিন পরে গঙ্গালাভ করেন। তাঁহার শ্রাদ্ধাদি-কার্য্যে বিধবাবিবাহের প্রতিবাদিগণ অনেকে শক্রতা করিয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই। শ্রাদ্ধোপলক্ষে এ প্রদেশের বহুসংখ্যক ব্রাহ্মণ ও পণ্ডিতগণের সমাগম হইয়াছিল; অনেকে মনে করিয়াছিল, বিদ্যাসাগরের পিতামহীর শ্রাদ্ধে কোনও ব্রাহ্মণ ভোজন করিতে আসিবেন না; তাহা হইলেই পিতৃদেব মনোদুঃখে দেশত্যাগী হইবেন। যাহারা এরূপ মনে করিয়াছিল, তাহারা অতি নির্ব্বোধ; কারণ, অগ্রজ মহাশয় দেশে অবৈতনিক ইংরাজী-সংস্কৃত বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন, প্রায় চারি পাঁচ শত বালককে বিনা বেতনে শিক্ষা এবং ঐ সমস্ত বালককে পুস্তক কাগজ শ্লেট প্রভৃতি প্রদান করিতেন। ইহা ভিন্ন বাটীতে প্রত্যহ ৬০টী বিদেশস্থ সম্ভ্রান্ত ও অধ্যাপকদের বিদ্যার্থী সন্তানগণকে অন্নবস্ত্র প্রদান করিয়া অধ্যয়ন করাইতেন। মধ্যে মধ্যে অনেক ভিন্ন গ্রামের ছাত্রগণেরও চাকরি করিয়া দিতেন। দেশে দাতব্যঔষধালয় স্থাপন করিয়াছিলেন। ডাক্তার বিনা ভিজিটে গ্রামের ও সন্নিহিত গ্রামবাসীদিগের ভবনে চিকিৎসা করিতে যাইত। নাইট্র-স্কুলের মধ্যে অনেকেই কলিকাতার বাসায় অন্নবস্ত্র পাইয়া, মেডিকেল-কলেজে বিদ্যাশিক্ষা করিয়া চিকিৎসক হইয়াছিল। এতদ্ব্যতীত কি ধনশালী, কি মধ্যবিত্ত, কি দরিদ্র, সকল সম্প্রদায়ের লোক বিপদাপন্ন হইয়া আশ্রয় লইলে, বিপদ্ হইতে পরিত্রাণ পাইত; চাঁদা প্রদান করিয়া, বিস্তর বিদ্যালয় স্থাপন করিয়া সাধারণের বিশিষ্টরূপ প্রিয়পাত্র হইয়াছিলেন। এবংবিধ লোকের পিতামহীর শ্রাদ্ধে শত্রুপক্ষ কেমন করিয়া বিঘ্ন জন্মাইতে পারে?

 অগ্রজ মহাশয়, পিতৃদেবকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য, শ্রাদ্ধের ব্যয়ার্থ রীতিমত টাকা দিয়াছিলেন। শ্রাদ্ধের দিবস অনেক অধ্যাপক ভট্টাচার্য্যের সমাগম হইয়াছিল। বরদাপরগণার প্রায় সমস্ত ব্রাহ্মণ, কুটুম্ব ও বন্ধুবান্ধব অন্যুন