পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৫৫

পিতা বলিয়া এ প্রদেশের সকল স্থানের লোকই আমাকে পরম সমাদর করিয়া থাকেন; অথচ তুমি কাশী, এলাহাবাদ, কানপুর, মথুৱা, বৃন্দাবন, জ্বালামুখী, পুষ্কর প্রভৃতি তীর্থে কখন আগমন করা নাই। তোমার শব্দপরিচয়ে আমি সকলের নিকট পরিচিত হইতেছি। অনন্তর, অগ্রজ মহাশয়ের অনুরোধে পিতৃদেব ত্বরায় দেশে পুনরাগমন করেন।

 সংস্কৃত-কলেজের ছাত্রদিগের উৎসাহ-বৰ্দ্ধনার্থ অগ্রজ মহাশয়, তৎকালের লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর গ্রাণ্ড্ সাহেবকে বলেন যে, রামকমল ভট্টাচার্য্য, গিরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রামাক্ষয় চট্টোপাধ্যায়কে ডেপুটি মাজিষ্ট্রেটের পদে নিযুক্ত করা আবশ্যক হইয়াছে। সাহেব, উহাঁদের নাম লিখিয়া রাখিলেন এবং বলিলেন, “ইহাঁরা এক্ষণে কি করিতেছেন শুনিতে ইচ্ছা করি।” অগ্রজ বলিলেন, “রামকমল, কলিকাতার নর্ম্ম্যাল-স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত আছেন।” সাহেব শুনিয়া উত্তর করিলেন, “যিনি ছেলে পড়াইয়া থাকেন, তিনি অকর্ম্মা হইয়াছেন, তাঁহার দ্বারা এ সকল কার্য্য সুচারুরূপে সম্পন্ন হওয়া কঠিন।” ইহা শুনিয়া দাদা বলিলেন, “রামকমল সংস্কৃত ও ইংরাজী ভালরূপ জানেন। বিশেষতঃ অঙ্কে ইহাঁর তুল্য লোক এক্ষণে দেখিতে পাওয়া যায় না। অতএব ইঁহাকে ডেপুটী মাজিষ্ট্রেটের পদে নিযুক্ত না করিলে, আমি বড়ই দুঃখিত হইব।” তাহা শুনিয়া সাহেব বলিলেন, “আচ্ছা, পণ্ডিত, তোমার কথা স্বীকার করিলাম।” গিরিশ কি করেন জিজ্ঞাসা করিলে বলিলেন, ইনি এক্ষণে চব্বিশ-পরগণার জজ-আদালতে ওকালতি করিতেছেন। তাহা শুনিয়া, সাহেব উত্তর করেন, “ইনি উহাঁর অপেক্ষা উপযুক্ত লোক, ইনি ভালরূপ কার্য্য করিতে পরিবেন।” রামাক্ষয়ের এই পরিচয় দেন যে, ইনি আমার অধীনে ডেপুটী ইনস্পেক্টরের পদে থাকিয়া, মফঃস্বলের বিদ্যালয় সকল পরিদর্শন করিতেছেন। ইহা শুনিয়া সাহেব উত্তর করেন যে, ইনিও কার্য্যক্ষম হইবেন।

 কয়েক মাস অতীত হইল, তথাপি ইহাঁরা কার্য্যভার প্রাপ্ত হইলেন না। তজ্জন্য এক দিন রামকমল, অগ্রজকে বলিলেন, “আপনার কথায় বিশ্বাস নাই,