পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

না পারিলে, তাহারা নিশ্চিন্ত হইয়া দীর্ঘকাল কেমন করিয়া শিক্ষা করিবে।” ন্যায়রত্নের কথা শুনিয়া, অগ্রজ বলিলেন, “যে পর্য্যন্ত আপনার পশার না হইবে, সেই পর্য্যন্ত আমি মাসিক দশ টাকা দিতে পারিব, আপনি নিশ্চিন্ত হইয়া ছাত্র রাখিয়া দৰ্শন-শাস্ত্রের ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হউন।” দাদা, ক্রমিক আট বৎসরকাল মাসে মাসে দশ টাকা করিয়া ন্যায়রত্বের বাটীতে পাঠাইয়া দিতেন। এতদ্ব্যতীত মধ্যে মধ্যে উহাঁর পরিবারগণকে বস্ত্রাদিও প্রদান করিতেন। ঐ টাকা ব্যতীত মধ্যে মধ্যে আরও বিশ পঞ্চাশ টাকা সাহায্য করিতেন। পরে পাশার হইলে পর, এক দিবস ন্যায়রত্ন মহাশয়, স্বয়ং দাদাকে বলিলেন, “আর আপনি সাহায্য না করিলেও আমার দিনপাত হইতে পারে।” ন্যায়রত্ন মহাশয়, প্রথমেই আপনার অবস্থা অনেককে জানাইয়াছিলেন, কিন্তু কেহই এরূপ সাহায্য করিতে সাহস করেন নাই। তিনি এ বিষয় অনেকের নিকট স্বীকার করিয়া, আপন কৃতজ্ঞতা দেখাইতেন এবং বিদ্যাসাগর মহাশয়কে আন্তরিক শ্রদ্ধা করিতেন; অগ্রজও ন্যায়রত্নকে আন্তরিক স্নেহ করিতেন। ন্যায়রত্ন মহাশয়, কৃতজ্ঞতা-সহকারে সভাস্থলে নিজে যেরূপ প্রকাশ করিয়াছিলেন, তাহাই এস্থলে লিখিত হইল।

 সন। ১২৭২ সালের অগ্রহায়ণ মাসে পিতৃদেব স্বপ্ন দেখেন যে, ত্বরায় তোমার বাসভূমি শ্মশান হইবে। স্বপ্ন দেখিয়া পিতৃদেব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইলেন। তদনন্তর বিখ্যাত গঙ্গানারায়ণ ভট্টাচার্য্যকে ডাকাইয়া, তাঁহার কোষ্ঠীর ফল গণনা করাইলেন। তিনিও ঐ কথা ব্যক্ত করিলেন; অধিকন্তু বলিলেন যে “ত্বরায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শনির দশা উপস্থিত হইবে। গণনানুসারে দেখিতেছি, তাঁহার আত্মবিচ্ছেদ, বন্ধুবিচ্ছেদ ও ভ্রাতৃবিচ্ছেদ ঘটিবে ও তাঁহাকে দেশত্যাগী হইতে হইবে। এক দিনের জন্যও সুখী হইবেন না ও একস্থানে স্থায়ী হইবেন না। নূতন নূতন স্থানে যাইয়া বাস করিবার ইচ্ছা হইবে। ইহা আপনি অন্যের নিকট ব্যক্ত করিবেন না। বিশেষতঃ, বিদ্যাসাগর বাবাজীর নিকট ব্যক্ত করিলে, তিনি আমায় তিরস্কার করিতে পারেন।” স্বপ্ন-