পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৭৯

 নাবালক রাজপুত্রদিগকে নিয়মানুসারে ডাক্তার সি, আই, ই, বাবু রাজেন্দ্রলাল মিত্রের অধীনে থাকিবার আদেশ হওয়ায়, রাণী কাত্যায়নী রোদন করিতে লাগিলেন। তাঁহার ক্রন্দন দেখিয়া, অগ্রজ মহাশয় পুনরায় বীডন সাহেবকে অনুরোধ করায়, তাঁহার আদেশমতে নাবালকগণ বাটীতে অবস্থিতি করিয়া বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। উপরি-উক্ত বৃত্তান্তটী পূর্ব্বে দাদার নিকট শুনিয়াছিলাম, এবং এক্ষণে প্রতাপচন্দ্র সিংহ বাহাদুরের কুটুম্ব বাবু তারিণীচরণ ঘোষ মহাশয় ও মেট্রোপলিটন বিদ্যালয়ের অন্যতম শিক্ষক বাবু গোপীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতির প্রমুখাৎ অবগত হইয়াছি। এই বিষয়ে পাথেয়াদি নানা কার্য্যে অগ্রজ মহাশয়ের দুই সহস্ৰ মুদ্রার অধিক ব্যয় হয়। তিনি যখন যাহার উপকারার্থে পরিশ্রম করিতেন, তদ্বিষয়ে নানাস্থানে গমনজন্য যাহা ব্যয় হইত, তাহা কাহারও নিকট কখন গ্রহণ করেন নাই। এরূপ কার্য্য না করিলে, পাইকপাড়ার রাজ-ষ্টেটের ও রাজকুমারদিগের যে কি অবস্থা ঘটিত, তাহা পাঠকবর্গ অনুমান করিয়া লইবেন।

 খৃঃ ১৮৫৯ সালে তিনি যখন কান্দীতে বিদ্যালয় স্থাপন-মানসে গমন করেন তৎকালে তথায় বাবু লালমোহন ঘোষের পত্নী শ্রীমতী ক্ষেত্রমণি দাসী, অগ্রজের সহিত সাক্ষাৎ করিবার মানসে সংবাদ পাঠান। তাহাতে তিনি রাজাদিগকে বলেন, “যিনি সাক্ষাৎ করিবেন, ইনি আপনাদের কে হন?” রাজারা বলিলেন, “এ বাটীর ভাগিনেয়-বধু লালমোহন ঘোষের পত্নী শ্রীমতী ক্ষেত্রমণি দাসী; ইনি কলিকাতানিবাসী মৃত জগদ্দুর্লভ সিংহের কন্যা। আপনি উহাকে বালাকালে কলিকাতায় দেখিয়াছিলেন। ইনি মধ্যে মধ্যে আপনার নাম করিয়া থাকেন।” তাহা শুনিয়া দাদা বলিলেন, “আমি উহার সহিত দেখা করিব কি না? তোমাদের মত কি?” রাজারা বলিলেন, “আপনি উহাঁর সহিত অবশ্য দেখা করিতে পারেন।” অনন্তর সাক্ষাৎ হইলে পর, ক্ষেত্রমণি বলিলেন, “খুড়া মহাশয়! বাল্যকালে আমার পিত্রালয়ে আপনাদের বাসা ছিল। আপনি আমাকে কোলে করিয়া, মানুষ করিয়াছেন, এবং কতই স্নেহ ও যত্ন