পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৮১

ফিরাইয়া বাটী আইসেন। পরে তিনি ঐ মুদির নিকট বিদায় লইয়া রাজাদের বাটী গমন করেন। রাজবাটীর কয়েকটী বাবু তাঁহাকে বলিলেন, “মহাশয়! সামান্য লোকের দোকানে চটের উপর বসিয়াছিলেন কেন? আপনার অপমান বোধ হয় না?” ইহা শুনিয়া অগ্রজ বলিলেন, “তোমাদের খানকয়েক চেয়ার আছে বলিয়া কি তোমরা বড় লোক? আমি দরিদ্র-লোকের বাটীতে বসিয়া যত সুখী হই, বড়-লোকের বাটীতে বসিয়া তত তৃপ্তিলাভ করিতে পারি না। আমার সহিত তোমাদের বসিতে যদি লজ্জা হয়, তাহা হইলে আমি আর আসিব না।” তাহা শুনিয়া তাঁহারা বলিলেন, “মহাশয়! ক্ষমা করুন।” দাদা বলিলেন, “আমার পক্ষে ধনশালী ও দরিদ্র উভয়ই সমান।”

 খৃঃ ১৮৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে পূজ্যপাদ প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ মহাশয় পেনসন লইয়া কাশীযাত্রা করিবার উদ্যোগ পাইলে, অলঙ্কারশাস্ত্রের পদ শূন্য হয়। তর্কবাগীশ মহাশয়ের সহোদর রামময় চট্টোপাধ্যায় মহাশয়, সংস্কৃতকলেজে কাব্য, অলঙ্কার, জ্যোতিষ, স্মৃতি ও দর্শনের কিয়দংশ অধ্যয়ন করিয়া, সংস্কৃত-কলেজের উচ্চশ্রেণীর বৃত্তি প্রাপ্ত হন। রামময় চট্টোপাধ্যায় মহাশয়, তৎকালে কাব্যে ও অলঙ্কারে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন; আর সংস্কৃত গদ্যপদ্য-রচনায় তাঁহার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। তর্কবাগীশ মহাশয় ও অন্যান্য লোকে মনে করিয়াছিলেন যে, রামময়ই তাঁহার ভ্রাতার পদ পাইবার উপযুক্ত। কিন্তু এ পক্ষে মহেশ্চন্দ্র ন্যায়রত্ন মহাশয়ও ঐ পদ প্রাপ্ত্যভিলাষে আবেদন করেন। তৎকালে ন্যায়রত্ন, ষড়দর্শনে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। যদিও ইনি সংস্কৃত-কলেজের ছাত্র নহেন, তথাপি কাব্য ও অলঙ্কারে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। একটী পদ শূন্য, কিন্তু উক্ত পণ্ডিত দুইজনেই পদপ্রার্থী। কাউএল সাহেব, কাহাকে ঐ পদে নিযুক্ত করিবেন, ভাবিয়া কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া, বিদ্যাসাগর মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করেন যে, একটি পদ শূন্য আছে, উক্ত দুই পণ্ডিতের মধ্যে কে ঐ পদের উপযুক্ত লোক, তাহা নির্ব্বচন করিয়া দেন। আমি কাহাকে ঐ পদ দিব, স্থির করিতে পারি