পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৮৭

এইরূপ বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় মাসে, কোনদিন সত্তর, কোনদিন আশী জন লোক ক্ষুধায় প্রপীড়িত হইয়া চীৎকার করিত। এই সকল সংবাদ কলিকাতায় অগ্রজ মহাশয়কে লেখা হয়; তিনি উত্তর লিখেন যে, “স্বগ্রাম বীরসিংহ ও উহার সন্নিহিত পাঁচ ছয়টি গ্রামের দরিদ্রগণকে প্রত্যহ ভোজন করাইতে পারিব। অন্যান্য গ্রামের লোককে কেমন করিয়া খাওয়াইতে পারি। যেহেতু আমি ধনশালী লোক নাহি। অপরাপর গ্রামের দরিদ্রদিগকে প্রত্যহ ভোজন করাইতে হইলে, অনেক ব্যয় হইবে। এমনস্থলে জাহানাবাদের ডেপুটী মাজিষ্ট্রেট বাবু ঈশ্বরচন্দ্র মিত্রকে আমার নাম করিয়া বলিবে যে, তিনি জাহানাবাদ মহকুমার দুর্ভিক্ষের কথা গবর্ণমেণ্টে রিপোর্ট করিলে, আমি এখানে লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর সিসিল বীডনকে বলিয়া, সাহায্য করাইতে পারিব।” অগ্রজ মহাশয়ের আদেশ-পত্রানুসারে জাহানাবাদের ডেপুটী মাজিষ্ট্রেট বাবু ঈশ্বরচন্দ্র মিত্রকে বিশেষ বলায়, তিনি মধ্যমাগ্রজ দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন সহ ঘাঁটাল, ক্ষীরপাই, রাধানগর, চন্দ্রকোণা, রামজীবনপুর প্রভৃতি গ্রাম সকল ভ্রমণ ও পর্যবেক্ষণ করিয়া, প্রজাগণের দুরবস্থার বৃত্তান্ত রিপোর্ট করেন। তথায় অগ্রজ, বীডন সাহেব ও অন্যান্য সাহেবকে অনুরোধ করায়, লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর বীডন সাহেব, স্থানে স্থানে অন্নসত্র স্থাপনজন্য ডেপুটী মাজিষ্ট্রেট বাবুকে আদেশ করেন। বাবু ঈশ্বরচন্দ্র মিত্র ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোণা, রামজীবনপুর, শ্যামবাজার, জাহানাবাদ, খানাকুল প্রভৃতি কয়েকটি বিখ্যাত ও বহুজনাকীর্ণ গ্রামে গবর্ণমেণ্টের অন্নসত্র স্থাপন করেন। কার্য্যদক্ষ বাবু ঈশ্বরচন্দ্র মিত্র মহাশয়, অনন্যকর্ম্মা ও অনন্যমনা হইয়া, এ প্রদেশের সম্ভ্রান্ত লোকের দ্বারে দ্বারে ভ্রমণপূর্ব্বক যথেষ্ট টাকা সংগ্রহ করিয়া, উক্ত অন্নসত্রের সাহায্যার্থ প্রদান করেন, এবং স্থানীয় সম্ভ্রান্ত লোকদিগকে ঐ অন্নসত্রের তত্ত্বাবধায়ক করেন। প্রত্যহ উক্ত অন্নসত্র সকলে, স্থানীয় অভুক্ত দরিদ্রসমূহ ভোজন করিয়া প্রাণধারণ করিতে লাগিল। শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্ত্তিক ও অগ্রহায়ণ পর্য্যন্ত গবর্ণমেণ্টের অন্নসত্রের কার্য্য চলিল। ইহাতে দরিদ্রলোকেরা ভোজন করিয়া প্রাণরক্ষা