পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কাশী পাঠাইবার পর অবধি, অগ্রজের অত্যন্ত দুর্ভাবনা উপস্থিত হয়। তৎকালে তিনি সর্ব্বদাই অন্যমনস্ক থাকিতেন এবং মধ্যে মধ্যে পিতৃদেবের জন্য অশ্রু বিসর্জ্জন করিতেন। দুর্ভাবনায় রাত্রিতে তাঁহার নিদ্রা হইত না। এই সকল কারণে তাঁহার পীড়া আরও প্রবল হইয়াছিল।

 সন। ১২৭৪ সালের বৈশাখ মাসে অগ্রজ মহাশয়, কায়িক অত্যন্ত অসুস্থতাপ্রযুক্ত, চিকিৎসকদের উপদেশানুসারে জলবায়ু পরিবর্ত্তনমানসে বীরসিংহায় আগমন করেন। তৎকালে একটী বিধবা নারী সাংসারিক ক্লেশ-নিবারণমানসে, স্বীয় পতির কয়েক বিঘা সকর ভূমি কোন এক ব্যক্তিকে বিলি বন্দোবস্ত করেন, ইহাতে তাঁহার দুই জন আত্মীয় ঐ নিরুপায়ার বিরুদ্ধে ন্যায়বিরুদ্ধ কার্য্যে প্রবৃত্ত হন। নিরুপায়া অবীরা, অগ্রজ মহাশয়ের শরণা লইলেন। ঐ বিধবার রোদনে অগ্রজ অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন এবং অবিলম্বে উক্ত আত্মীয়দ্বয়কে আনয়নার্থে এক আত্মীয়কে প্রেরণ করিলেন। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি উপস্থিত হইলে, অগ্রজ অনুরোধ করেন যে, এই পতিপুত্রবিহীনা তোমাদের আত্মীয়া, অতএব কয়েক বিঘা জমার জমি ত্যাগ কর। তাহাতে তিনি বলিলেন, “আমরা ইঁহার উত্তরাধিকারী; ইনি লোকান্তর গমন করিলে পর, আমরাই ঐ ভূমি পাইব। কিন্তু যাহাতে উহা আমরা আর না পাই, এই অভিপ্রায়ে ইনি জীবদ্দশাতেই সমস্ত বিষয় অন্যকে বন্ধক দিতেছেন; সুতরাং আমরা উপায়ান্তরাবলম্বনে প্রবৃত্ত হইয়াছি।” অগ্রজ বলিলেন, “ইঁহার অবর্ত্তমানে ঐ ভূমি তোমরা পাইবে সত্য, কিন্তু এক্ষণে ইনি কি খাইয়া প্রাণধারণ করেন, অগত্য বন্ধক দিতেছেন; ইহাতে তোমাদের স্বত্বের কোনও হানি হইবে না। তোমরা সামান্য ভূমির জন্য অসৎপথ অবলম্বন করিতেছ কেন?” তাহাতে তিনি উহার ভূমি ত্যাগ করিতে সম্মত না হইয়া প্রস্থান করেন। তৎক্ষণাৎ দাদা ঐ ভূমি বাহাল রাখাইয়া দেওয়াইলেন। এই সংবাদে বাটীর পরিবারবর্গের মধ্যে কেহ কেহ অগ্রজকে বিনীতভাবে অত্যন্ত দুঃখিতান্তঃকরণে এই অনুরোধ করেন, যেন ঐ অবীরা ভূমি না পায়। তাহাতে