পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বলিলেন, “এরূপ নিঃস্বার্থ নির্লোেভ পণ্ডিত আমি কখনও দেখি নাই।” তদবধি রাজা তাঁহাকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি করিতেন।

 কিছু দিন পরে তিনি যৎকালে হুগলি, বৰ্দ্ধমান, নদীয়া ও মেদিনীপুর এই জেলাচতুষ্টয়ের স্কুলসমূহের এসপিসিয়াল ইনস্পেক্টরের পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন, তৎকালে কয়েকবার বর্দ্ধমানের বিদ্যালয় পরিদর্শনার্থে আগমন করেন। ইহার কয়েক বৎসর পরে, যখন মিস্ কারপেণ্টার কলিকাতায় আগমন করেন, তৎকালেও লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণরের অনুরোধে অগ্রজ মহাশয়, মিস্ কারপেণ্টারকে কলিকাতার কয়েকটি বিদ্যালয় ও কয়েকজন কৃতবিদ্য লোকের অন্তঃপুরস্থ স্ত্রীলোকদিগের সহিত সাক্ষাৎ করাইয়াছিলেন, এবং পরিশেষে ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দে এক দিবস মিস কারপেণ্টারকে সমভিব্যাহারে লইয়া, উত্তরপাড়ানিবাসী জমিদার বাবু বিজয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় মহাশয় প্রভৃতির স্থাপিত বালিকাবিদ্যালয় দেখাইতে গমন করেন। তথা হইতে প্রত্যাগমনসময়ে বগী গাড়ীতে আরোহণ করিয়া আসিতেছিলেন; মোড় ফিরিবার সময়, গাড়ী উলটিয়া পড়ে। বিদ্যাসাগর মহাশয় গাড়ী হইতে পড়িয়া অচেতন অবস্থায়, ঘোড়ার পায়ের নিকটে ভূমিতে নিপতিত ছিলেন। তথায় উপস্থিত দর্শকগণের মধ্যে কেহ সাহস করিয়া, সেই স্থান হইতে ঘোড়াকে সরান নাই। স্কুল-ইনস্পেক্টার উড়রো সাহেব ও বিদ্যালয়সমূহের ডিরেক্টার রাটকিনসন্ সাহেব তাহা দেখিয়া, ত্বরায় ঘোড়ার লাগাম ধরিয়া সেই স্থান হইতে অপসারিত করেন। ঘোড়া না সরাইলে, ঘোড়ার পদাঘাতেই অপমৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল। তাঁহাকে ভূমিতে পতিত ও হতজ্ঞান দেখিয়া, মিস কারপেণ্টারের চক্ষে জল আসিল। তিনি নিজের উৎকৃষ্ট বসনের দ্বারা দাদার গায়ের কাদা ও ধূলি সমস্ত পরিমাৰ্জি্তজ করিয়া দেন। ঐ গাড়ী হইতে পতনাবধি অগ্রজ মহাশয়ের স্বাস্থ্যভঙ্গ হয়। নানা প্রতীকারেও সম্পূর্ণরূপ আরোগ্য লাভ করিতে পারেন নাই। পরে তিনি কিছুদিন ফরেসডাঙ্গায় অবস্থিতি করেন। তথায় অবস্থিতি করিয়া বিশেষ ফলপ্রাপ্ত না হওয়ায়, পুনর্ব্বার কলিকাতায় ফিরিয়া যান। অনন্তর স্বাস্থ্যরক্ষার