পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৯৯

জন্য চিকিৎসকগণ কিছু দিনের নিমিত্ত কলিকাতা পরিত্যাগ করিয়া, তৎকালের স্বাস্থ্যকর স্থান বৰ্দ্ধমানে অবস্থিতি করিতে উপদেশ প্রদান করেন। তৎকালে বৰ্দ্ধমান অতি স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল। প্রথমতঃ বৰ্দ্ধমানবাসী বাবু প্যারীচরণ মিত্রের বাটীতে প্রায় এক মাস অবস্থিতি করেন।

 ঐ সময় মাইকেল মধুসুদন দত্ত ইংলণ্ড হইতে কলিকাতায় আসিয়া হাইকোটে প্রবিষ্ট হইবার উদ্যোগ করেন; কোন কারণে তাঁহার হাইকোর্টে প্রবিষ্ট হইবার বাধা জন্মিল। মাইকেল নিরুপায় হইয়া, বৰ্দ্ধমানে প্যারীচরণ মিত্রের ভবনস্থিত অগ্রজ মহাশয়ের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গমন করেন। তথায় যাইয়া তাহার নিকট বিস্তর অনুনয় বিনয় করিলে পর, তিনি দয়ার্দ্র হইয়া চরিত্রসম্বন্ধে সার্টিফিকেট লিখিয়া, মাইকেলের হস্তে প্রদান করেন। অনন্তর অবিলম্বে অগ্রজ মহাশয় কলিকাতা আসিয়া যোগাড় করিয়া দেওয়াতে, মাইকেল, বারিষ্টারের কর্ম্মে প্রবিষ্ট হইলেন। প্রথমতঃ বিলাতে মাইকেলের ঋণ পরিশোধের জন্য ছয় হাজার টাকা প্রেরণ করেন। দ্বিতীয়তঃ বারিষ্টারের কার্য্যে বাধা জন্মিলে, দাদা স্বতঃপরতঃ অনুরোধ দ্বারা বাধা খণ্ডাইয়া দেন। এতদ্ব্যতীত যখন যত টাকার আবশ্যক হইত, তাহা প্রদান করিতেন। একারণ, মাইকেল, অগ্রজের নিতান্ত অনুগত ছিলেন। দুর্ভাগ্যপ্রযুক্ত মাইকেল স্বল্পদিনের মধ্যেই লোকান্তরিত হন। মাইকেলের মৃত্যুসংবাদে অগ্রজ মহাশয় অত্যন্ত দুঃখিত হইয়াছিলেন।

 ঐ সময় তিনি মধ্যে মধ্যে জননী-দেবী, বিদ্যালয় ও বিধবাবিবাহদি কার্য্যকলাপ পরিদর্শনার্থে, পান্ধী করিয়া উচালনের রাজপথ দিয়া বৰ্দ্ধমান হইতে বীরসিংহায় গমন করিতেন। কখন কখন উচালনে রাত্রিতে অবস্থিতি করিতেন। অনেক অনাথ দরিদ্রবালক সম্মুখে উপস্থিত হইত। অগ্রজ, তাহাদের দুঃখদর্শনে দুঃখিত হইয়া তাহাদিগকে কিছু কিছু প্রদান না করিয়া জলগ্রহণ করিতেন না। প্রায় দুই তিন জন দরিদ্র বালক সমভিব্যাহারে করিয়া বাটী আগমন করিতেন। বাটীতে লোকের কোনও অসদ্ভাব ছিল না;