পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কোনও কোনও স্ত্রীলোক বারম্বার আসিয়া, প্রতারণা করিয়া লইয়া যাইত। একদিবস উক্ত পাচক হরকালী, একটী স্ত্রীলোককে বলেন যে, “মাগী, বিদ্যাসাগরকে কি তোরা লেদা আমগাছ পাইয়াছিস্?” হরকালীর প্রমুখাৎ উক্ত কথা শুনিয়া, অগ্রজ মহাশয়, হরকালীকে বলেন, “তুমি বহুকাল আমার বাটীতে আছ; তোমার বেতন কি বাকী আছে বল, ফেলিয়া দিই, এবং তুমি এই মুহুর্ত্তেই আমার বাটী হইতে বিদায় হও। দরিদ্র লোককে আমি দান করিব, তোমার বাবার কি?” ইহা শুনিয়া হরকালী বলেন, “ঐ বৃদ্ধা এক সপ্তাহ অতীত হয় নাই বস্ত্র ও টাকা লইয়াছে; তাহা আপনার স্মরণ নাই, এই কারণেই এরূপ বলিয়াছি। যাহা হউক, আমার অপরাধ হইয়াছে, এ যাত্রা আমায় ক্ষমা করুন।” তথাপি অগ্রজ, হরকালীকে না রাখিয়া, মাসিক দুই টাকা মাসহরার বন্দোবস্ত করিয়া দিয়া বিদায় দেন।

 ১৮৬৯ খৃঃ অব্দে অগ্রজ মহাশয়, প্যারীচরণ মিত্রের বাটীর সন্নিহিত ৺রসিককৃষ্ণ মল্লিকের বাটী ভাড়া করিয়া অবস্থিতি করেন। সেই সময়ে বৰ্দ্ধমানে দেশব্যাপক ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রাদুর্ভাব হয়। অগ্রজের বাসার অতি সন্নিকটে একটি মুসলমান-পল্লী ছিল। সেই পাড়ার লোকেরা অতি দরিদ্র। সকলেই জ্বারাক্রান্ত হইয়া কষ্ট পাইতেছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহাদের শোচনীয় অবস্থা দেখিয়া, স্থির হইয়া থাকিতে পারিলেন না। নিজ বাসাবাটীতে তিনি একটি ডিস্পেনসারি খুলিলেন এবং ডাক্তার গঙ্গানারায়ণ মিত্র মহাশয়ের হস্তে তাহার ভার ন্যস্ত করিলেন। দেশ ব্যাপিয়া জর হইতেছে, লোক ঔষধ ও অন্নাভাবে মরিতেছে দেখিয়া ও শুনিয়া, অগ্রজ মহাশয়, ত্বরায় কলিকাতায় যাইয়া, শ্রীযুক্ত লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর গ্রে সাহেব বাহাদুরকে সমস্ত বিবরণ জানাইলেন। দাদার প্রমুখাৎ অবগত হইয়া, গ্রে সাহেব বৰ্দ্ধমানে ডাক্তার প্রেরণ করেন এবং রিলিফ অপারেশনের কর্তৃপক্ষদিগকে পত্র লিখেন।

 বৰ্দ্ধমানের সিবিলসার্জ্জন ডাক্তার মেণ্টন, এ বিষয়ে কোন রিপোর্ট করেন নাই শুনিয়া, গ্রে সাহেব বিরক্তিভাব প্রকাশ করেন এবং আট দশ দিনের