পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিয়াও, তিনি নিজে ক্ষান্ত হন নাই। তাঁহার ডিস্পেনসারির ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। ঔষধ বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে সাগু, এরোরুট বিতরিত হইতে লাগিল। দুর্বল রোগীর জন্য দুগ্ধ ও সুরুয়ার পয়সা দিবার ভার গঙ্গানারায়ণ বাবুর উপর অর্পিত হয়। তিনি রোগীদের বাটীতে যাইয়া দুগ্ধাদি বিতরণ করিতেন। এই কার্য্যের জন্য গবর্ণমেণ্ট তাঁহাকে ধন্যবাদ দেন। দেখুন, সংবাদপত্রে না লিখিয়া, গোপনভাবে বিদ্যাসাগর মহাশয় বৰ্দ্ধমান জেলার কি পর্য্যন্ত উপকার করিয়াছিলেন! দীনদরিদ্রগণ অবারিতভাবে ঔষধ ও পথ্য পাইয়াছিল। ডাক্তার গঙ্গানারায়ণ বাবু ঔষধ বিতরণের সঙ্গে সাগু, দুগ্ধ এবং সুরুয়ার জন্য পয়সা দিয়াছিলেন। শীতকাল উপস্থিত হইল; দরিদ্র লোকের বস্ত্রাভাব দেখিয়া, বিদ্যাসাগর মহাশয় দুই সহস্র টাকার বস্ত্র আনাইলেন। রোগী ব্যতীত অনেক দরিদ্র ব্যক্তি শীতবস্ত্র ও পরিধেয় বস্ত্র পাইয়াছিল। প্রবঞ্চনা করিয়া কেহ কেহ বস্ত্র লইয়া যায়, তাহা ভালরূপ ভেদাভেদজন্য নির্ব্বাচন করিতে গিয়া, যেন কোন প্রকৃত দরিদ্র ব্যক্তি বঞ্চিত না হয়, এ বিষয়ে বিদ্যাসাগর মহাশয় বিশেষ লক্ষ্য রাখিতেন।

 ডিস্পেনসারির সম্পূর্ণভার বাবু গঙ্গানারায়ণ মিত্রের উপর ছিল। তথাপি তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়কে না জানাইয়া, কোনও কাজ করিতেন না। তাঁহার ঔদার্য্য ও বদান্যতা দেখিয়া, ডাক্তার গঙ্গানারায়ণ, রোগীদের জন্য ভাল ভাল ঔষধ আনাইতে লাগিলেন। কুইনাইনের অধিক আবশ্যকতা এবং উহা দুর্মূল্য দেখিয়া, ডাক্তার গঙ্গানারায়ণ, ইহার পরিবর্ত্তে সিঙ্কোনা ব্যবহার করিবার জন্য একবার প্রস্তাব করেন; কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয় ঐ ডাক্তারের প্রস্তাবে সম্মত হইলেন না। তিনি বলিলেন, “যখন পীড়া একই প্রকারের, তখন বড় লোক ও দরিদ্র ব্যক্তিনির্ব্বিশেষে এক প্রকারই ঔষধ হওয়া উচিত।” তিনি শয্যাশায়ী ব্যক্তিগণের বাটীতে যাইয়া, তাহাদের শুশ্রষার বন্দোবস্ত করিয়া দিতেন এবং অর্থ ও ঔষধ দিয়া তাহদের দুঃখ মোচন করিতেন। পূর্ব্বোক্ত ভগবানবাবুও ভ্রমণশীল ডাক্তার ছিলেন।