পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২৪১

 সন ১২৮৩ সালের শীতকালে অগ্রজ, বাদুড়-বাগানের নুতন বাটীতে প্রবেশ করেন। ঐ বাটীতেই স্বকীয় লাইব্রেরী স্থাপন করিয়া, একাকী নিভৃতভাবে থাকিবেন, এই অভিপ্রায়েই বাটী নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। তাঁহার অভিপ্রায় ছিল, পরিবারগণকে অন্য বাটীতে রাখিব; কিন্তু অন্য বাটী প্রস্তুত না হওয়াতে, সকল পরিবারগণকে ঐ বাটীতে আনয়ন করিলেন; আমরাও শ্রীচরণ-দর্শনে আগমন করিয়া যত দিন ইচ্ছা ঐ বাটীতেই থাকিতাম। এ বাটীতে প্রবেশ করিয়া অবধি, পরিবারবর্গের ও অন্যান্য সমাগত সম্ভ্রান্ত ও দীন-দরিদ্র ব্যক্তিদিগের আহারাদি বিষয়ে প্রচুর পরিমাণে ব্যয় করিতেন। সকলের প্রতি এরূপ সমভাবে প্রত্যহ ভোজন করান, অপর কোন স্থানে দৃষ্ট হয় না। নিজের আহার বা পরিধেয় বস্ত্রাদির কোন পারিপাট্য ছিল না। দিবসে অন্ন আহার করিতেন এবং রাত্রিতে মুড়ি ও সামান্যরূপ মিষ্টান্ন জলযোগ করিয়া রাত্রি-যাপন করিতেন। এই বাটীতে সাংসারিক-কার্য্যে ও আচার-ব্যবহারাদিতে অগ্রজের কনিষ্ঠা-কন্যা, তাহার জ্যেষ্ঠ ভগ্নী হেমলতাদেবীর সহযোগিনী ছিল এবং দয়াদাক্ষিণ্যাদিগুণেও উক্ত হেমলতাদেবীর সহযোগিনী ছিল।

 সন। ১২৮৪ সালের বৈশাখ মাসে দাদার কনিষ্ঠা কন্যা শ্রীমতী শরৎকুমারী দেবীর বিবাহ হয়। বর, শ্রীযুক্ত কার্ত্তিকচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কনিষ্ঠ জামাতাকে ও কন্যাকে দাদা অত্যন্ত স্নেহ করিতেন। কনিষ্ঠ জামাতা কার্ত্তিক বাবুকে বাটীতে রাখিয়া, লেখাপড়া শিখাইতে লাগিলেন। কার্ত্তিক বাবু সর্ব্বদা বাদুড়বাগানস্থ ভবনে উপস্থিত থাকিয়া, সমাগত সকল সম্প্রদায়ের লোকের সহিত ভদ্রতা করিতেন; এজন্য অনেকেই কার্ত্তিক বাবুকে ভাল বাসিয়া থাকেন।

 সন ১২৮৪ সালে অগ্রজ মহাশয়ের ছোট একটা ঘড়ী অদৃশ্য হয়; তাহার কোন অনুসন্ধান হইল না। এক দিবস ৺রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহের পুত্র অগ্রজের নিকট আসিয়া বলেন, “মহাশয়, আপনার ছোট, ঘড়ীটী কোথায়? একবার দেখিব।” দাদা বুলিলেন, “সেই ঘড়ীটী প্রায় পনর দিবস অতীত

১৬