পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪০
বিদ্যাসাগর-জীবনরিত।

ও ভূত্য ফুরসতকে সমভিব্যাহারে লওয়া হইয়াছিল। মণিকর্ণিকার ঘাটে দাহাদিকার্য্য সমাধা করিয়া, স্নান-তৰ্পণ সমাপনান্তে বাসায় প্রত্যাগমন করা হয়। দাদা, বাসায় উপস্থিত হইয়া ছেলেমানুষের মত রোদন করিতে লাগিলেন দেখিয়া, অনেকে আশ্চর্য্যান্বিত হইলেন যে, বিদ্যাসাগর মহাশয় নীতিজ্ঞ ও পণ্ডিত লোক হইয়া, বৃদ্ধ পিতার জন্য এত শোকাভিভুত কেন?

 ২রা বৈশাখ প্রাতঃকাল হইতে দাদার ভেদ বমি হইতে লাগিল। অত্যন্ত দুর্ব্বল হইতে লাগিলেন দেখিয়া, আমরা ভীত হইয়া বলিলাম, “অদ্য কাশী পরিত্যাগ করিয়া কলিকাতা যাইব।” প্রথমতঃ অগ্রজ মহাশয় শ্রাদ্ধাদিকার্য্য সমাধা করিয়া কলিকাতা যাইবেন, ইহা প্রকাশ করিলেন। কলিকাতা না যাইবার কারণ এই যে, ইতিপূর্বে পিতৃদেব এক উইল প্রস্তুত করিয়া, তাহা অগ্রজের হস্তে সমর্পণ করেন। উইলের মর্ম্ম এই যে, আমার অন্তিমসময়ে জ্যেষ্ঠপুত্র নিকটে থাকিবে ও দাহাদিকার্য্য সম্পন্ন করিয়া, কাশীতেই আদ্যশ্রাদ্ধ করিবে। আমি যে সকল মহারাষ্ট্ৰীয় বেদজ্ঞ ও অন্যান্য হিন্দুস্থানী ব্রাহ্মণগণকে ভোজন করাইতাম, তাহাদিগকে ভোজন করাইবে। তৎপরে স্বয়ং গয়ায় যাইয়া গয়াকৃত্য সমাধা করিবে। এই সকল কারণেই কলিকাতা যাইতে প্রথমতঃ সম্মত ছিলেন না। পরে আমি ঐ সকল ব্রাহ্মণদিগকে আনাইয়া বলিলাম, “দাদার পীড়া হইতেছে, অতএব দাদাকে অদ্যই কলিকাতা লইয়া যাইতে ইচ্ছা করি, মহাশয়দের এ বিষয়ে মত কি, প্রকাশ করিয়া বলুন।” অগ্রজের অবস্থা অবলোকন করিয়া, তাঁহারা সকলেই দাদাকে কলিকাতা যাইবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন এবং বলিলেন, অতঃপর সুস্থ হইয়া একবার আসিয়া, ব্রাহ্মণ-ভোজনাদি কার্য্য সম্পন্ন করিবেন। এ অবস্থায় কোন ঔষধ, সেবন করিবেন না। কলিকাতায় যাইয়াও তাঁহার অশ্রুবিন্দু নিবারণ হয় নাই।

 দশাহে যথাশাস্ত্র ঔৰ্দ্ধদৈহিক কৃত্য সমাধা করেন। পরে এক সময়ে কাশী আগমন করিয়া, পিতার আদেশ প্রতিপালন করিতে বিস্মৃত হন নাই। উইল অনুসারে কাশীতে কার্য্য সমাধা করিয়া, পিতৃভক্তি প্রদৰ্শন করিয়াছিলেন।