পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশুচরিত।
২১

“ছেলের কলেজের মাসিক বেতন ৫৲ টাকা দিব, আর বাটীর খরচ ৫৲ টাকা পাঠাইব।” ইহা শুনিয়া কেহ কেহ বলিলেন, “চোরবাগানের ইংরাজী স্কুলে নিযুক্ত করিলে, সামান্য বেতন লাগিবে।” এই বিষয়ে মাসাবধি আন্দোলন চলিতে লাগিল। জগদ্দুর্লভ সিংহের ভগিনী রাইমণি দাসী ও তাঁহার পরিবারগণ জ্যেষ্ঠাগ্রজ মহাশয়কে অতি শিশু দেখিয়া, অত্যন্ত ভাল বাসিতেন। পিতৃদেব চাকরি উপলক্ষে প্রাতঃকাল হইতে বেলা নয়টা পর্য্যন্ত কার্য্য সমাধা করিয়া বাসায় আসিয়া, পাকাদিকার্য্য সম্পন্ন করিয়া, উভয়ে ভোজন করিতেন। আফিস হইতে বাসায় আসিয়া রাত্রি দশটার সময় পুনর্ব্বা‌র পাকাদিকার্য্য সমাধা করিয়া, উভয়ে নিদ্রা যাইতেন। প্রাতঃকাল হইলে অষ্টমবর্ষীয় বালক অগ্রজ মহাশয়, প্রায় সমস্ত দিন ঐ দয়াময়ী স্ত্রীলোকদ্বয়ের দয়ার উপর নির্ভর করিয়া, বিদেশে অবস্থিতি করিতেন। তাঁহারা স্নেহপূর্বক খাবার দিতেন ও কথাবার্ত্তায় ভুলাইয়া রাখিতেন। দাদা যখন জননী প্রভৃতির জন্য ভাবনা করিতেন, তখন ঐ স্ত্রীলোকদ্বয়, ভুলাইয়া ও কত প্রকার গল্প করিয়া সান্ত্ব‌না করিতেন এবং দেশের জন্য বা জননীর জন্য ভাবিতে দিতেন না। উক্ত রাইমণি দাসী ও জগদ্দুর্লভ সিংহের পত্নীর দয়াগুণেই শৈশবকালে অগ্রজ মহাশয় বিস্তর উপকার পাইয়াছিলেন। তাঁহারা এরূপ দয়াদাক্ষিণ্য প্রকাশ না করিলে, দাদা কলিকাতায় অবস্থিতি করিতে পারিতেন না। অদ্যাপি ঐ দয়াময়ীদের নাম স্মরণ হইলে, দাদার চক্ষে জল আসিত।

 জগদ্দুর্লভ বাবুর বাটীর সন্নিহিত বাবু শিবচন্দ্র মল্লিকের বাটীতে এক পাঠশালা ছিল। তথায় রামলোচন সরকারের নিকট শিক্ষা করিবার জন্য দাদাকে নিযুক্ত করেন। কার্ত্তিক, অগ্রহায়ণ দুই মাস কাল তাঁহার নিকট লেখাপড়া শিক্ষা করেন। দাদা প্রত্যহ পিতৃদেবকে বলিতেন, “বীরসিংহায় কালীকান্ত খুড়ার পাঠশালে যেরূপ উপদেশ ও শিক্ষা পাইয়াছি, তদপেক্ষা ইহাঁর নিকট অতিরিক্ত কিছুই শিক্ষা করিবার আশা নাই। এই পাঠশালে যাইয়া কেবল বসিয়া থাকিতে হয়। এখানে সরকার