পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত

কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ও পিতৃদেব, মধ্যে জগদীশপুরে যে স্থানে মাইল-ষ্টোন ছিল, সেই স্থান দেখান নাই; ইহার কারণ, অক্ষর চিনিতে পারিয়াছেন কি না, জানিবার অভিপ্রায়ে উভয়ে যুক্তি করিয়াছিলেন। অগ্রজ বলিলেন, “ইহার পূর্ব্বে‌ তবে একটা পাথর আমরা দেখিতে বিস্মৃত হইয়াছি।” তখন কালীকান্ত বলিলেন, “ঈশ্বর! তোমাকে ঠকাইবার জন্য আমরা এরূপ করিয়াছি। তুমি যে বলিতে পারিলে, তাহাতে আমরা পরম আহ্লা‌দিত হইলাম।” শ্য‌াখালা গ্রাম হইতে শালিকার গঙ্গার ঘাট দশ ক্রোশ। সন্ধ্যার সময় তথায় উপস্থিত হইলেন, এবং গঙ্গা পার হইয়া বড়বাজারের বাবু জগদ্দুর্লভ সিংহের বাটীতে উপস্থিত হইলেন। পরদিন প্রাতে পিতৃদেব, জগদ্দুর্লভ বাবুর এক ইংরাজী বিল ঠিক দিতেছিলেন; তথায় অগ্রজ মহাশয় বসিয়া বলিলেন, “বাবা, আমি ইহা ঠিক দিতে পারি। তাহা শুনিয়া উক্ত সিংহ মহাশয় বলিলেন, “ঈশ্বর! তুমি ইংরাজী অঙ্ক কেমন করিয়া জানিলে?” তাহাতে তিনি বলিলেন, “কেন, বাবা ও কালীকান্ত খুড়া শ্য‌াখালা হইতে শালিকার ঘাট পর্য্য‌ন্ত পাথরে অঙ্কিত মাইল-ষ্টোন দেখাইয়াছেন। তাহাতেই ইংরাজী অঙ্কের এক সংখ্যা হইতে ১০ সংখ্যা পর্য্য‌ন্ত শিখিয়াছি। সেই জন্য ঠিক দিতে পারিব সাহস করিয়াছি।” সিংহ মহাশয়, কয়েকটা বিল ঠিক দিবার জন্য দাদাকে দিলেন। ঐ বিলে দাদার ঠিক দেওয়া নির্ভু‌ল হইয়াছে দেখিয়া, কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁহাকে ক্রোড়ে করিয়া মুখচুম্বনপূর্ব্ব‌ক বলিলেন, “তুমি চিরজীবী হও, আমি যে তোমার প্রতি আন্তরিক যত্নের সহিত পরিশ্রম করিয়াছি, তাঁহা অদ্য আমার সার্থক হইল।” উপস্থিত সকলে বলিলেন, “বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়! আপনার এই বুদ্ধিমান পুত্রটিকে ভালরূপ লেখাপড়া শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক।” তাহাতে পিতৃদেব বলিলেন, “ইহাকে হিন্দু কলেজে পড়িতে দিব মনে মনে স্থির করিয়াছি।” তাহা শুনিয়া, উপস্থিত সকলে বলিলেন, “আপনি মাসিক ১০৲ টাকা বেতন পাইয়া থাকেন, তাহাতে হিন্দু কলেজে কেমন করিয়া অধ্যয়ন করাইবেন?” এই কথা শুনিয়া, তিনি তাঁহাদিগকে উত্তর করিলেন,