পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চারিত।
২৯

গির্জার ঘণ্টারব শুনিয়া, তাঁহার নিদ্রা ভাঙ্গাইয়া দিতেন; তিনি উঠিয়া সমস্ত রাত্রি পাঠাভ্যাস করিতেন। এইরূপ অত্যধিক পরিশ্রম করিয়া, মধ্যে মধ্যে তিনি অত্যন্ত কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হইতেন। ব্যাকরণশ্রেণীতে তিন বৎসর ছয় মাস ছিলেন; কিন্তু তিন বৎসরের মধ্যেই ব্যাকরণ সমাপ্ত করেন। শেষ ছয় মাস কাল অমরকোষের মনুষ্যবৰ্গ ও ভট্টিকাব্যের পঞ্চম সৰ্গ পর্য্যন্ত পাঠ করিয়াছিলেন।

 একাদশবর্ষ বয়ঃক্রমকালে অগ্রজ মহাশয়ের উপনয়ন সংস্কার হয়। দ্বাদশবর্ষ বয়ঃক্রমসময়ে অগ্রজ মহাশয় সাহিত্যশ্রেণীতে প্রবিষ্ট হন। তৎকালে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার মহাশয় সাহিত্যশাস্ত্রের শ্রেণীতে অধ্যাপক ছিলেন। শুনিয়াছি, তর্কালঙ্কার মহাশয় ঁকাশীধামে বাল্যকাল হইতে সাহিত্যশাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া, বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। গদ্য-পদ্য-রচনা-বিষয়ে তাঁহার তুল্য লোক প্রায় কেহ তৎকালে জন্মগ্রহণ করেন নাই। একারণ সংস্কৃত-কলেজ স্থাপনসময়ে উইলসন সাহেব, তাঁহাকে কাশীধাম হইতে আনাইয়া এই পদে নিযুক্ত করেন। উইলসন সাহেব প্রথমতুঃ বেনারসের টাঁকশালে কর্ম্ম করিতেন। তদনুন্তর কলিকাতায় সংস্কৃত-কলেজে অধ্যাক্ষের পদে নিযুক্ত হন। কাশীধামে সাহেবের সহিত তর্কালঙ্কার মহাশয়ের বিশেষরূপ আলাপ হইয়াছিল; এজন্য সংস্কৃত-কলেজের সাহিত্যশ্রেণীর শিক্ষকতাপদে নিযুক্ত করিবার জন্য তাঁহাকে আনয়ন করিয়াছিলেন। বাঙ্গালাদেশে কাব্যশাস্ত্রে ইহার তুল্য পণ্ডিত আর কেহই ছিলেন না। দাদার সাহিত্যশ্রেণীতে প্রবেশকালে মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ, মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রভৃতি অনেক বিদ্যার্থী এই সাহিত্যশ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইয়াছিলেন। তন্মধ্যে তিনি সকল ছাত্র অপেক্ষা অল্পবয়স্ক ছিলেন; এজন্য প্রথমতঃ তর্কালঙ্কার মহাশয় বুলেন যে, “ঈশ্বর এত ছোট ছেলে, কাব্য বুঝিতে পরিবে কি?” এজন্য তিনি ভট্টি‌র কয়েকটি কবিতার অর্থ করিতে বলেন। অগ্রজ যেরূপ অর্থ ও অন্বয় করিলেন, অন্য কোন ছাত্র সেরূপ অন্বয়ার্থ করিতে পারিলেন না, তজ্জ‌ন্য তর্কালঙ্কার