পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

না করিয়া তাড়াতাড়ি বলিয়াছিল, তাহা ভালই হউক আর মন্দই হউক, সাহেব তাহাকে বুদ্ধিমান্‌ জানিয়া প্রাইজ দিয়াছিলেন।

 দাদা, বাল্যকালে অত্যন্ত একগুঁয়ে ছিলেন। নিজে যাহা ভাল বোধ করিতেন, তাহাই করিতেন; অপরের উপদেশ গ্রাহ্য‌ করিতেন না। গুরুতর লোক উপদেশ দিলেও ঘাড় বাঁকাইয়া স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া থাকিতেন। তজ্জন্য পিতা প্রহার করিলেও শুনিতেন না। আপনার জিদ বজায় রাখিবার জন্য শৈশবকাল হইতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। ঘাড় সোজা করিতেন না বলিয়া, পিতা বলিতেন, “আমার পিতা তোমাকে যে, ঘাড়াবাঁকা এঁড়ে গরুর সহিত তুলনা করিয়াছিলেন, তাহা সত্য।” পিতা তাঁহার স্বভাব বুঝিয়া চলিতেন। যে দিন সাদা বস্ত্র না থাকিত, সে দিন বলিতেন, আজ ভাল কাপড় পরিয়া কলেজে যাইতে হইবে। তিনি হঠাৎ বলিতেন, না, আজ ময়লা কাপড় পরিয়া যাইব। যে দিন বলিতেন আজ স্নান করিতে হইবে, শ্রবণমাত্র দাদা বলিতেন যে, আজ স্নান করিব না; পিতা প্রহার করিয়াও স্নান করাইতে পারিতেন না। সঙ্গে করিয়া টাঁকশালের ঘাটে নামাইয়া দিলেও দাঁড়াইয়া থাকিতেন। পিতা, চড় চাপড় মারিয়া জোর করিয়া স্নান করাইতেন। অগ্রজের যাহা ইচ্ছা হইত, শৈশবকাল হইতে একাল পর্য্যন্ত তাহাই করিয়াছেন। তিনি বাল্যকাল হইতে এ পর্য্যন্ত নিজের প্রতিজ্ঞা বজায় রাখিয়াছেন এবং অসাধারণ উন্নতি লাভ করিয়াছেন। পিতা ইহাকে ঘাড় কেঁদো নাম দিয়াছিলেন, অর্থাৎ ঘাড় বাঁকাইলে সোজা হইবার নহে।

 আমা হইতে ক্লাসে আর কেহ ভাল শিক্ষা করিতে না পারে, এরূপ জিদের উপর লেখাপড়া শিখিতে দাদা চিরকাল আন্তরিক যত্ন পাইয়াছিলেন। এমন কি, শৈশবকালেও প্রায় সমস্ত রাত্রি জাগরণ করিয়া অভ্যাস করিতেন। প্রায়ই রাত্রি বারটা বাজিলে আমায় তুলিয়া দিবেন, নচেৎ আমার পাঠাভ্যাস হইবে না।” পিতা, আহারের পর দুই ঘণ্টা বসিয়া থাকিতেন, নিকট আরমাণি