পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৩১

কথা কহিতে সমর্থ ছিলেন, সেইরূপ অনর্গল প্রাকৃত-ভাষাও কহিতে পারিতেন। এই অসাধারণ ক্ষমতা দেখিয়া, তৎকালের পণ্ডিতব্যক্তিরা বলিতেন যে, ঈশ্বর শ্রুতিধর; এই বালক দীর্ঘজীবী হইলে অদ্বিতীয় লোক হইবে। সাহিত্যশ্রেণীতে দ্বিতীয় বৎসরের পরীক্ষায় সর্ব্বোৎকৃষ্ট হইয়া, অগ্রজ সর্ব্ব‌প্রধান পারিতোষিক পাইয়াছিলেন। তৎকালে নিয়ম ছিল, যে ছাত্রের হস্তাক্ষর ভাল হইত, সে লেখার জন্য স্বতন্ত্র একটি পারিতোষিক পাইত। ক্লাসের মধ্যে দাদার হস্তাক্ষর ভাল ছিল; এজন্য তিনি প্রতি বৎসরেই লেখার প্রাইজ পাইতেন। সেই সময়ে অনেক সংস্কৃত-পুস্তক মুদ্রিত ছিল না; অগ্রজ মহাশয় সুবিধা অনুসারে অনেক সংস্কৃত-পুস্তক স্বহস্তে লিখিয়াছিলেন।

 এই সময় পিতৃদেব তাঁহার মধ্যমপুত্র অষ্টমবর্ষীয় দীনবন্ধুকে লেখাপড়া শিক্ষার মানসে কলিকাতায় আনয়ন করিলেন। ঐ সময় হইতে অগ্রজকে দুই বেলা সকলের পাকাদি-কার্য্য সম্পন্ন করিতে হইত। বাসায় কোন দাসদাসী ছিল না। প্রত্যুষে নিদ্রাভঙ্গ হইলে, কিয়ৎক্ষণ পুস্তক আবৃত্তি করিয়া, বড়বাজার টাঁকশালের গঙ্গার ঘাটে স্নান করিয়া আসিবার সময়, বড়বাজার কাশীনাথ বাবুর বাজারে যাইতেন। তথা হইতে মৎস্য ও আলু-পটল প্রভৃতি তারকারী ক্রয় করিয়া আনিতেন। বাসায় পঁহুছিয়া, প্রথমতঃ হরিদ্রাদি ঝালমশলা বাটিয়া, উনন ধরাইয়া মুগের দাউল পাক করিয়া, মৎস্যের ঝোল রন্ধন করিতেন। তখন বাসায় চারিজন লোক ভোজন করিতেন। ভোজনের পর সমুদয় উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার ও বাসনাদি ধৌত করিতে হইত। হাঁড়ি মাজিয়া, বাসন ধৌত করিয়া ও স্থান পরিষ্কার করিয়া দাদার অঙ্গুলির অগ্রভাগ ও নখগুলি ক্ষয় হইয়া যাইত। হরিদ্র বাটার জন্য হন্তে হরিদ্রার চিহ্ন থাকিত। ভোজন করিতে করিতে যদি একটা ভাত ছড়ান হইত বা পাতে কিছু উচ্ছিষ্ট পড়িয়া থাকিত, তাহা হইলে পিতৃদেব তৎক্ষণাৎ চড় মারিতেন; তজ্জ‌ন্য‌ ভোজনের সময় পাত পরিষ্কার করিয়া খাইতে হইত। তিনি বাল্যকালে পিতার নিকট এই সকল রীতি শিক্ষা পাইয়াছিলেন এবং বরাবর ভোজনের