পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

পারিতোষিক প্রাপ্ত হন। তর্কবাগীশ মহাশয় অন্যধ্যায়-দিবসে, ছাত্রগণকে গদ্য-পদ্য-রচনা ও কবিতার টীকা প্রস্তুত করিতে উপদেশ দিতেন।

 সংস্কৃত-রচনায় অগ্রজের বিশিষ্টরূপ ক্ষমতা জন্মিয়াছিল; একারণ, তর্কবাগীশ মহাশয় সকল ছাত্র অপেক্ষা তাহাকে আন্তরিক ভালবাসিতেন। এই সময়ে তাঁহাকে প্রত্যহ দুই বেলা পাকাদিকার্য্য সমাধা করিতে হইত। পাক করিতে করিতে ইনি নিজের পাঠ্য-পুস্তক লইয়া পাঠানুশীলন করিতেন। অগ্রজ মহাশয় ও মধ্যমাগ্রজ মহাশয়, বেলা দশটার সময় বড়বাজার হইতে পটলডাঙ্গাস্থ কলেজে যাইবার সময়ে, পথে বহি দেখিতে দেখিতে গমন করিতেন। বাসায় প্রায় সমস্ত রাত্রি জাগরণ করিয়া অধ্যয়ন করিতেন। জ্যেষ্ঠাগ্রজ অত্যধিক পরিশ্রম করিয়া, উৎকট রোগে আক্রান্ত হইলেন; প্রত্যহ রক্তভেদ হইতে লাগিল। কলিকাতায় থাকিয়া ঔষধাদি দ্বারা রোগ হইতে অব্যাহতি পাইলেন না, অগত্যা দেশে আসিতে হইল। দেশে আসিয়াও নানাবিধ ঔষধ সেবনে রোগের উপশম হইল না। অবশেষে প্রতিবাসী কাশীনাথ পালের অভীষ্টদেব, তক্রমিশ্রিত করিয়া সিদ্ধ ওল ভোজন করিবার ব্যবস্থা করেন। এই ঔষধ কতিপয় দিবস ব্যবহার করায়, সম্পূর্ণরূপ আরোগ্যলাভ করিয়াছিলেন।

 অনন্তর পুনর্ব্বা‌র কলিকাতায় যাইয়া রীতিমত অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হইলেন, এবং পূর্ব্বে‌র ন্যায় স্বয়ং পাকাদিকার্য্য সম্পন্ন করিতে লাগিলেন। একদিন মধ্যম সহোদর দীনবন্ধুকে সন্ধ্যার সময় বাজার করিতে পাঠাইয়াছিলেন। রাত্রি একাদশ ঘটিকা অতীত হইল, তথাপি দীনবন্ধু বাসায় উপস্থিত না হওয়াতে, তাঁহার অত্যন্ত দুর্ভাবনা হইল। ভ্রাতার জন্য উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন। অবশেষে অন্যান্য লোকের উপদেশানুসারে প্রথমতঃ বড়বাজারে কাশীনাথ বাবুর বাজারে অনুসন্ধান করিলেন। তথায় অনুসন্ধান না পাওয়ায়, পরিশেষে যোড়াসাঁকো নূতন বাজারে অনুসন্ধান করিতে করিতে দেখিলেন, দীনবন্ধু বাজারে দেওয়াল ঠেস দিয়া নিদ্রা যাইতেছেন। তখন নিদ্রা