পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৩৭

ভাঙ্গাইয়া তাঁহাকে বাসায় লইয়া গেলেন। অগ্রজ মহাশয় ছোট ছোট ভাই ও ভগিনীদিগকে আন্তরিক স্নেহ করিতেন। এরূপ ভ্রাতৃস্নেহ অপর কাহারও দৃষ্টিগোচর হয় নাই।

 অগ্রজ মহাশয় শৈশবকাল হইতে কাল্পনিক দেবতার প্রতি কখনই ভক্তি বা শ্রদ্ধা করিতেন না। জগতের মধ্যে কেবল হিন্দুগণ দেবদেবী প্রতিমার প্রতি যেরূপ হৃদয়ের সহিত ভক্তি প্রকাশ করেন, তিনি জনক-জননীকে বাল্যকাল হইতে তদ্রুপ আন্তরিক শ্রদ্ধা ও দেবতাস্বরূপ জ্ঞান করিতেন। অগ্রজ মহাশয় দেশে আগমন করিলে, আদিশিক্ষক কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে আন্তরিক ভক্তি-সহকারে, প্রণাম করিবার নিমিত্ত তাঁহার বাটীতে যাইতেন। চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ও তাঁহাকে সন্তানসদৃশ স্নেহ করিতেন। অগ্রজ মহাশয়, দেশের কি ইতর কি ভদ্র সকল সম্প্রদায়ের লোকের প্রতি সৌজন্যপ্রকাশ করিতেন। ছোট ছোট ছেলের সহিত তিনি কপাটী খেলিতেন, এতদ্ব্যতীত কখন তাস, শতরঞ্জি প্রভৃতি ক্রীড়া করিতেন না ও জানিতেন না।

 অলঙ্কার-শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে অপরাহ্ন চারি ঘটিকার সময় বিদ্যালয়ের ছুটি হইলে, ঠন্‌ঠনিয়ার চৌরাস্তার কিয়দীর পূর্বে তারাকান্ত বিস্তাসাগর, তারানাথ তর্কবাচস্পতি ও মধুসূদন বাচস্পতি মহাশয়দের বাসায় যাইতেন। ঐ সময় তাঁহাদের কলেজের অধ্যয়ন শেষ হইয়াছিল। উহাঁরা অগ্রজকে অত্যন্ত স্নেহ করিতেন; একারণ, তিনি প্রত্যহ ছুটির পর তাঁহাদের বাসায় যাইতেন। সন্ধ্যা পর্য্যন্ত তথায় অবস্থিতি করিয়া, সাহিত্যদর্পণ দেখিতেন। একদিবস বিখ্যাত দর্শনশাস্ত্রবেত্তা জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন মহাশয়, জজ পণ্ডিতের পদ প্রাপ্ত্যভিলাষে ল-কমিটির পরীক্ষা দিবেন বলিয়া, তারানাথ তর্কবাচস্পতির সহিত যুক্তি করিতে আসিয়াছিলেন। তিনি তথায় অগ্রজ মহাশয়কে সাহিত্যদৰ্পণ আবৃত্তি করিতেছেন দেখিয়া চমৎকৃত হইলেন, এবং বাচস্পতিকে জিজ্ঞাসা। করিলেন, “এরূপ অল্পবয়স্ক বালক সাহিত্যদর্পণ বুঝিতে পারে কি?” ইহা শ্রবণ করিয়া বাচস্পতি মহাশয় বলিলেন, “কেমন শিখিয়াছে ও সংস্কৃতে ইহার