পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৩৯

অধ্যাপক নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তর্কভূষণ মহাশয়, দর্শনশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন বটে; কিন্তু প্রাচীন স্মৃতিশাস্ত্রে তাঁহার তৎপূর্বে বিশেষ দৃষ্টি ছিল না; সুতরাং স্মৃতির ব্যবহারাধ্যায়ে ভালরূপ ব্যবস্থা স্থির করিতে অক্ষম ছিলেন। যদিও অগ্রজ স্মৃতির শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইয়াছিলেন, তথাপি ঐ পণ্ডিতের নিকট অধ্যয়ন করিয়া মনের তৃপ্তি জন্মাইত না; একারণ, অদ্বিতীয় ধীশক্তিসম্পন্ন, হরচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের নিকট যাইয়া স্মৃতি অধ্যয়ন করিতেন। সাধারণ পণ্ডিতগণ দুই তিন বৎসরে যে সমস্ত প্রাচীন স্মৃতিশাস্ত্র শিক্ষা করিয়া পরীক্ষা দিতেন, তিনি স্মৃতির সেই সকল গ্রন্থ ছয় মাসে মুখস্থ করিয়া, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইবার মানসে পিতৃদেবকে বলিলেন, “আমি ছয় মাস পাকাদিকার্য্য সম্পাদন করিতে পারিব না।” সুতরাং তাঁহার অনুজ দীনবন্ধুকে দুইবেলা পাকাদিকার্য সমাধা করিতে হইত। তখন মধ্যমাগ্রজ দীনবন্ধুর বয়ঃক্রম দশ বৎসর মাত্র। জ্যেষ্ঠাগ্রজ প্রাতঃকাল হইতে বেলা নয় ঘটিকা পর্য্যন্ত অনন্যকর্ম্মা ও অনন্যমনা হইয়া, সমগ্র মনুসংহিতা, মিতাক্ষরা প্রভৃতি স্মৃতিগ্রন্থ আবৃত্তি করিতেন এবং ভোজনান্তে বড়বাজার হইতে পটলডাঙ্গাস্থ বিদ্যালয়ে যাইবার সময়, পথে আবৃত্তি করিতে করিতে গমন করিতেন। কলেজে উপস্থিত হইয়া পড়া বন্ধ করিতেন। পুনরায় চারিটার পর বাসায় আসিবার সময়, পথে আবৃত্তি করিতে করিতে বাসায় আসিতেন। রাত্রি দশটার সময় ভোজন করিয়া, দুই ঘণ্টা নিদ্রা যাইতেন। নিকটস্থ আরমাণি গির্জ্জা‌র ঘড়িতে রাত্রি বারটা বাজিলে, পুনর্ব্বা‌র নিদ্রা হইতে উঠিয়া, সমস্ত রাত্রি স্মৃতি আবৃত্তি করিতেন। এইরূপ অনবরত ছয় মাস কাল সমস্ত রাত্রি পরিশ্রম করিয়া, ল-কমিটির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলেন।

 অদ্যপি যাহার শ্মশ্রূরেখারও উদয় হয় নাই, সেই ১৭/১৮ বৎসরের বালক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, ল-কমিটির সার্টিফিকেট পাইলেন। এত অল্পবয়সে, ছয় মাসের মধ্যে তিনি সমগ্র প্রাচীন স্মৃতিগ্রন্থ কণ্ঠস্থ করিয়াছিলেন; ইহাতে অধ্যাপক মহাশয়েরা তাঁহার অলৌকিক-ক্ষমতা-দর্শনে বিস্ময়াপন্ন হইয়াছিলেন।