পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৪১

বড়বাজারের বাসায় যে সকল সহাধ্যায়ী যাইতেন, তাহাদিগকে জল খাওয়াইতেন; একারণ, অনেকে মনে করিতেন যে, ঈশ্বর ধনশালী লোক। পূজার অবকাশে দেশে আগমন করিলে, ষে যে প্রতিবাসিগণ পীড়িত হইয়াছেন শুনিতেন, তাহাদের বাটীতে সর্ব্বদা যাইতেন এবং তাহাদের শুশ্রূষাদিকার্যো স্বতঃপ্রবৃত্ত হইতেন। অপর লোকে রোগীর শুশ্রূষাদিকার্য্যে নিযুক্ত থাকিতে ঘৃণা প্রকাশ বা ক্লেশ বোধ করিত, কিন্তু অগ্রজ মহাশয় যে কোন জাতীয় লোকের পীড়া হইলে, সন্তুষ্ট-চিত্তে তাহাদের সেবা করিতে অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করিতেন। একারণ, তৎকালে দেশস্থ লোকগণ দাদাকে দয়াময় বলিত। অনেকেই দেখিয়াছেন যে, সামান্য বিড়াল বা কুকুর মরিলেও তাহা দেখিয়া দাদার চক্ষে জল আসিত; কোন লোক রোদন করিলে, তিনিও তাহাদের সহিত রোদনে প্রবৃত্ত হইতেন।

 পূজার অবকাশে গ্রামের গদাধর পাল, ব্রজমোহন চক্রবর্ত্তী ও ছোট ছোট ভ্রাতৃগণের সহিত কপাটী খেলিতেন। অন্য কোনরূপ ক্রীড়ায় কখন তাঁহাকে আসক্ত হইতে দেখি নাই। কপাটী খেলিলে অত্যন্ত শ্রম হয়, তাহাতে উদরাময় প্রভৃতি রোগ আরোগ্য হয়, এতদভিপ্রায়ে কপাটী খেলায় প্রবৃত্ত হইতেন। এতদ্ব্যতীত কখন কখন মদনমোহন মণ্ডলের সহিত লাঠী খেলিতেন।

 দেশস্থ যে সকল লোকের দিনপাত হওয়া দুষ্কর দেখিতেন, তাহাদিগকে যথাসাধ্য সাহায্য করিতে ক্ষান্ত থাকিতেন না। অন্যান্য লোকের পরিধেয় বস্ত্র না থাকিলে, গামছা পরিধান করিয়া, নিজের বস্ত্রগুলি তাহাদিগকে বিতরণ করিতেন। বাল্যকালে দেশে যাইয়া, কৃষকগণের সহিত মাঠে কাস্তিয়া লইয়া ধান্য কাটতেন। ভ্রাতৃগণকে বলিতেন, সকলে মাঠে চল্‌, মাঠ হইতে ধান বহিয়া আনিতে হইবে। মজুরদের সহিত ধান বহিয়া তিনি পরম আহ্লা‌দিত হইতেন।

 অগ্রজ মহাশয় উনিশ বৎসর বয়ঃক্রমকালে, বেদান্ত-শাস্ত্রের শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইলেন। পূজ্যপাদ শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি মহাশয়, ঐ সময় বেদান্ত-শাস্ত্রের