পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চারিত।
৪৫

একশত টাকা ও কবিতা-রচনায় একশত টাকা পারিতোষিক পাইবে। এক দিনেই উভয় প্রকার রচনার সময় নিৰ্দ্ধারিত হয়। দশটা হইতে একটা পর্য্যন্ত গদ্য রচনা, এবং একটা হইতে চারিটা পর্য্যন্ত কবিতা-রচনার সময় ছিল। গদ্যপদ্য-পরীক্ষার দিবসে, বেলা দশটার সময়ে, সকল ছাত্র পরীক্ষাস্থলে উপস্থিত হইয়া লিখিতে আরম্ভ করিল। অলঙ্কার-শাস্ত্রের অধ্যাপক প্রেমচন্দ্র, তর্কবাগীশ মহাশয়, অগ্রজকে পরীক্ষাস্থলে অনুপস্থিত দেখিয়া, বিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যক্ষ মার্শেল সাহেব মহোদয়কে বলিয়া, অগ্রজকে বলপূর্ব্ব‌ক তথায় লইয়া গিয়া একস্থানে বসাইয়া দিলেন। অগ্রজ বলিলেন, “মহাশয়! আমার রচনা ভাল হইবে না, আমি লিখিতে পারিব না।” তর্কবাগীশ মহাশয় তাহা শুনিয়া অত্যন্ত রাগান্বিত হইয়া বলিলেন, “যা পার লিখ, নচেৎ অধ্যক্ষ মার্শেল সাহেব রাগ করিবেন।” অগ্রজ বলিলেন, “কি লিখিব?” তিনি বলিলেন, “সতং হি নাম আরম্ভ করিয়া লিখা।” তদনুসারে তিনি লিখিতে প্রবৃত্ত হইলেন। সত্য-কথনের মহিমা, গদ্য-রচনার বিষয় ছিল। তিনি উক্ত বিষয় যেরূপ লিখিয়াছিলেন, তাহা সর্ব্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট হইয়াছিল। তিনি ভাবিয়াছিলেন যে, আমার লেখা বোধ হয় ভাল হয় নাই; কিন্তু পরীক্ষক মহাশয়েরা সকল ছাত্রের রচনা অপেক্ষা তাহার রচনাকে সর্ব্বো‌ৎকৃষ্ট স্থির করিয়াছিলেন। সুতরাং তিনি গদ্য-রচনার পারিতোষিক ১০০৲ এক་ শত টাকা প্রাপ্ত হইলেন।

 ইহার অব্যবহিত পরে পিতৃদেব, মধ্যমাগ্রাজের বিবাহ কার্য্য সমাধা করেন; এতদুপলক্ষে পিতৃদেবের বিলক্ষণ ঋণ হইয়াছিল। বীরসিংহাস্থ ভবনের ব্যয়ের কিছুমাত্র লাঘব করিতে পারিলেন না, সুতরাং অগত্যা কলিকাতাস্থ বাসার ব্যয়ের হ্রাস করেন। দুগ্ধ, মৎস্যাদি কিছুকালের জন্য রহিত হয়। বৈকালে জল খাইবার জন্য আধ্য পয়সার ছোলা আনিয়া ভিজান হইত। আধা পয়সার বাতাসা আসিত; ইহাই বৈকালে সকলের জলখাবার ব্যবস্থা ছিল। ঐ আর্দ্র ছোলার কিয়দংশ আবার রাত্রে কুমড়ার ব্যঞ্জনের সহিত