পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

পাক হইত। ঐ সময় কষ্টের পরিসীমা ছিল না। প্রাতে ও রাত্রিতে ছোলা-মিশ্রিত কুমড়ার ডাল্‌না ও পোস্তভাজা ব্যঞ্জন হইত। তৎকালে এরূপ কষ্ট স্বীকার করিয়া, স্বহস্তে পাকাদি সম্পন্ন করিয়া, অগ্রজ যেরূপ লেখাপড়া শিক্ষা করিয়াছিলেন, এক্ষণকার ছেলেরা ভাল ভাল দ্রব্য খাইয়া এবং উত্তম বসন পরিধান করিয়াও সেরূপ যত্নপূর্বক লেখাপড়া শিক্ষা করে না।

 এই বৎসর কার্ত্তিক মাসে কলিকাতা বড়বাজারের বাবু জগদ্দুর্লভ সিংহের যে বাটীতে বাসা ছিল, অগত্যা ঐ বাটী প্রায় ৩/৪ মাসের জন্য পরিত্যাগ করিতে হয়। ইহার কারণ এই যে, উক্ত সিংহ ভ্রমক্রমে চোরাই কোম্পানির কাগজ ক্রয় করিয়া, রাজদ্বারে দণ্ডার্হ‌ হন। তাঁহার বাটী কিছু দিনের জন্য পুলিশকর্ম্মচারী দ্বারা বেষ্টিত হয়। সুতরাং অগ্রজ মহাশয়ের সহিত আমরা দুই মাসকাল পাতুলগ্রামনিবাসী গুরুপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পিসা মহাশয়ের বাসায় অবস্থিতি করিয়া, কলেজে অধ্যয়ন করি। ঐ সময় অগ্রজ, কলেজের সকল ছাত্র অপেক্ষা পদ্যে অত্যুৎকৃষ্ট সংস্কৃত-কবিতা রচনা করেন; তজ্জন্য শিক্ষা-সমাজ তাঁহাকে ৫০৲ টাকা পুরস্কার প্রদান করেন। উপরি উক্ত জগদ্দুর্লভ সিংহ মোকদ্দমা করিয়া ঋণগ্রস্ত হন। আমরা তাঁহার বাটীতে ভাড়া না দিয়া, দীর্ঘকাল অবস্থিতি করিতাম। তিনি অত্যন্ত দুরবস্থা-প্রযুক্ত তেতালায় যে গৃহে আমাদের বাসা ছিল, তাহা তনসুকদাস নামক হিন্দুস্থানীকে ভাড়ায় বিলি করেন। ঐ ভাড়ার টাকায় ঐ সিংহের সংসার চলিতে লাগিল। সুতরাং আমাদিগকে ঐ বাটীর নিমগৃহে অগত্যা বাস করিতে হইল।

 বড়বাজারের নিম্নতলস্থ গৃহ অত্যন্ত আৰ্দ্র; তাহাতে শয়ন করিয়া অগ্রজ মহাশয় বিষম রোগাক্রান্ত হইয়া, অনেক কষ্টভোগ করেন। সর্ব্ব‌দা আমবাতের মত হইত। অনেক প্রতিকার দ্বারা পরে প্রকৃতিস্থ হন। ঐ সময়ে অগ্রজ মহাশয়, বেদান্তের শ্রেণী হইতে ন্যায়শাস্ত্রের শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হন। তৎকালে নিমচাঁদ শিরোমণি মহাশয় কলেজের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত ছিলেন। সে সময়ে তিনি বঙ্গদেশের মধ্যে অদ্বিতীয় দর্শনশাস্ত্রবেত্তা ছিলেন।