পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
বিদ্যাসাগরজীবনচরিত।

রচনা শিক্ষা দিতেন। দর্শন ও স্মৃতির শিক্ষক মহাশয়, প্রশ্নের উত্তর লিখিবার অনুশীলনে বিশিষ্টরূপ যত্নবান্ হইতেন। এরূপ নিয়ম করিয়া দেওয়ায়, ছাত্রগণের লিখিবার অধিকার জন্মিল। অগ্রজের এই অভিনব বন্দোবস্তে, শিক্ষক ও বিদ্যার্থিগণ পরম সন্তোষলাভ করিয়াছিলেন।

 অগ্রজ মহাশয়, একসময় সংস্কৃত-কলেজের বিশেষ কার্যোপলক্ষে হিন্দুকলেজের প্রিন্সিপাল কার্ সাহেবের নিকট গমন করিয়াছিলেন। সাহেব, টেবিলের উপর চর্মপাদুকাসহিত চরণদ্বয় উত্তোলন করিয়া, অগ্রজের সহিত কথোপকথন করেন। তাঁহার সেই অসৌজন্যে, অগ্রজ, মনে মনে অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। কিছুদিন পরে ঐ কার সাহেব, হিন্দু-কলেজের কোন কার্য্যানুরোধে, সংস্কৃত-কলেজে অগ্রজের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আইসেন। কার্ সাহেব, ইতিপূর্বে যেরূপ শিষ্টাচার দেখাইয়া আপ্যায়িত করিয়াছিলেন, অদ্যাপি তিনি তাহা বিস্মৃত হন নাই। সাহেব দেখা করিতে আসিতেছেন শুনিয়া, অগ্রজ, চটী-চর্মপাদুকাসহিত চরণযুগল টেবিলের উপর রাখিয়া, সাহেবকে বসিবার জন্য কোনরূপ সম্ভাষণ বা অভ্যর্থনা করিলেন না। সাহেব দণ্ডায়মান হইয়া, তাঁহার সহিত কথা কহিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণপরে সাহেব লজ্জিত ও অবমানিত হইয়া প্রস্থান করিলেন। তৎপরে শিক্ষাসমাজের সেক্রেটারি ময়েট্ সাহেবের নিকট রিপোর্ট করেন যে, হিন্দু-কলেজের কোন কার্যানুবোধে, সংস্কৃত-কলেজের আসিষ্টাণ্ট সেক্রেটারির সমীপে গিয়াছিলাম। তিনি আমার প্রতি যেরূপ অভদ্রতা করিয়াছেন, তাহাতে আমার বিশেষরূপ অপমান হইয়াছে। অন্য কোন ইউরোপীয়ান হইলে, এরূপ অপমান সহ্য করিতেন না। শিক্ষাসমাজ, অগ্রজ মহাশয়ের কৈফিয়ৎ তলপ করেন। তিনিও তাহার উত্তর লেখেন যে, ইতিপূর্বে ঐ সাহেব আমার প্রতি ঐরূপ অসৌজন্য প্রকাশ করিয়াছিলেন, অর্থাৎ আমাকে বসিতে না বলিয়া, টেবিলের উপর চর্ম্ম-পাদুকা সহিত চরণদ্বয় অৰ্পণ করিয়া, আমার সহিত কথাবার্তা, কহিয়াছিলেন। তাহাতে শিক্ষা-সমাজের সেক্রেটারি পরম সন্তোষ লাভ করিয়া, হাস্যপূর্ণ-বদনে