পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

ময়েট্ সাহেবের নিকট এই আবেদন করিয়াছিল যে, ত্বরায় উপযুক্ত শিক্ষক নিযুক্ত না হইলে, আমাদের পাঠের অনেক ক্ষতি হইতেছে। তৎকালে অনেকের আন্তরিক ইচ্ছা ছিল যে, সর্ব্বানন্দ বহুকাল হইতে কলেজের সকল শ্রেণীতে প্রতিনিধির কার্য্য করিয়া থাকেন, অতএব উপস্থিত সাহিত্যশ্রেণীর কার্য্যটী ইহাঁরই হওয়া উচিত। সেই সময়ে অনেকে বলিয়াছিলেন, “বিদ্যাসাগর মহাশয়, বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকে তাড়াইয়া আপনার বন্ধু মদনকে আনাইবার জন্য ছাত্রগণকে খেপাইয়াছে।” অনন্তর, বিদ্যাসাগরের কৌশলে মদনমোহন তর্কালঙ্কার ঐ পদে নিযুক্ত হইবার আদেশ পাইয়াছে শুনিয়া, ন্যায়বাগীশ মহাশয় প্রস্থান করেন। কৃষ্ণনগরের কার্য্য ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় আসিতে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের বিলম্ব হওয়ায়, অগ্রজ মহাশয় কয়েকদিন সাহিত্যশ্রেণীতে কিরাতার্জ্জুনীয় অর্থাৎ ভারবি পড়াইতে প্রবৃত্ত হইলেন। ছাত্রগণ তাঁহার অধ্যাপনার পাণ্ডিত্য-দর্শনে পরমহলাদিত হইয়াছিল। তদনন্তর মদনমোহন তর্কালঙ্কার কলিকাতায় আগমনপূর্ব্বক কয়েকদিবস বিদ্যাসাগরের বাসায় অবস্থিতি করিয়া, তাঁহার নিকট ভারবির যে যে অংশ ছাত্রগণকে পড়াইতে হইবে, সেই সেই স্থলের সন্দেহ ভঞ্জন করিয়া লইতেন। ক্রমশঃ অধ্যাপনাকার্য্য করিয়া, তর্কালঙ্কার সাহিত্য-শাস্ত্রে অসাধারণ লোক তইয়া উঠিলেন। মদনমোহন তর্কালঙ্কার, অগ্রজের বাল্যবন্ধু ও সহাধ্যায়ী ছিলেন। এই কারণেই যে উহাঁকে ঐ পদে নিযুক্ত করাইয়াছিলেন, এরূপ নহে; সহাধ্যয়নকালে উক্ত মদনমোহন তর্কালঙ্কারকে কাব্যশাস্ত্রে বিশেষরূপ বুৎপন্ন জানিতেন বলিয়াই, উহাকে ঐ পদে নিযুক্ত করিবার জন্য প্রয়াস পাইয়াছিলেন। অগ্রজের আন্তরিক আগ্রহাতিশয় না থাকিলে, ঐরূপ উপযুক্ত তর্কালঙ্কার মহাশয় উক্ত পদে নিযুক্ত হইতেন না।

 তৎকালে ভাল বাঙ্গালা পুস্তক ছিল না। জ্ঞানপ্রদীপ, প্রবোধচন্দ্রোদয়, পুরুষপরীক্ষা ও হিতোপদেশের বাঙ্গালা প্রভৃতি যে তিন চারি খানি মাত্র বাঙ্গালা পুস্তক ছিল, তৎপাঠে কোনও ফলোদয় হইত না। সিবিলিয়ানদের