পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরি।
৮৭

তৃতীয় ভাগ শিশুশিক্ষা পড়িয়া, তৎপরে কি পুস্তক অধ্যয়ন করিবে? অনন্তর রুডিমেণ্টস্ অফ নলেজ নামক পুস্তক বঙ্গভাষায় অনুবাদ করিয়া, ১২৫৭ সালে বোধোদয় নামে একখানি পুস্তক মুদ্রিত ও প্রচারিত করেন। নিম্নশ্রেণীস্থ বালকগণের পাঠোপযোগী এরূপ কোনও পুস্তক একাল পর্য্যন্ত কেহ প্রকাশ করিতে পারেন নাই।

 বাল্যকাল হইতেই অগ্রজ মহাশয় মনে মনে চিন্তা করিতেন যে, স্ত্রীলোকেরা কেন লেখাপড়া শিক্ষা করিতে পায় না? কেনই বা ইহারা যাবজ্জীবন জ্ঞানোপার্জনে অসমর্থা থাকে? কুলীনদিগের বহুবিবাহ কি উপায়ে রহিত হয়? ইহা শাস্ত্রসম্মত নয়; এই কুপ্রথা যতদিন না দেশ হইতে নির্ব্বাসিত হয়, ততদিন বঙ্গদেশবাসী হিন্দুগণের মঙ্গল নাই।

 বিধবা বালিকা দৃষ্টিপথে পতিত হইলে, তিনি আন্তরিক দুঃখানুভব করিতেন। এক দিবস, কোন আত্মীয়ের দ্বাদশবর্ষীয়া দুহিতা বিধবা হইলে, তদ্দর্শনে জননী-দেবী শোকে অভিভূত হইয়া রোদন করিতে লাগিলেন। অগ্রজ, জননীকে সান্ত্বনা করিলে পর, জননী ও পিতৃদেব বলিলেন যে, “বিধবাবালিকার পুনর্ব্বার বিবাহবিধি কি ধর্ম্মশাস্ত্রের কোনও স্থলে কিছু লেখা নাই? শাস্ত্রকারেরা কি এতই নিৰ্দয় ছিলেন?” জনক-জননীর মুখনিঃসৃত এই বাক্য তাঁহার হৃদয়ে প্রোথিত হইয়া রহিল।

 হিন্দু কলেজের সিনিয়র ডিপার্টমেণ্টের ছাত্রগণ ঐক্য হইয়া, সর্ব্ব-শুভকরী নামক মাসিক সংবাদপত্রিকা প্রকাশ করেন। উক্ত সংবাদপত্রের অধ্যক্ষ বাবু রাজকৃষ্ণ মিত্র প্রভৃতি অনুরোধ করিয়া, অগ্রজকে বলেন যে, “আমাদের এই নূতন কাগজে প্রথম কি লেখা উচিত, তাহা আপনি স্বয়ং লিখিয়া দিন। প্রথম কাগজে আপনার রচনা প্রকাশ হইলে, কাগজের গৌরব হইবে এবং সকলে সমাদরপূর্ব্বক কাগজ দেখিবে।” উহাঁদের অনুরোধের বশবর্ত্তী হইয়া, তিনি প্রথমতঃ বাল্যবিবাহের দোষ কি, তাহা রচনা করিয়াছিলেন। তাঁহার লিখিত বলিয়া, তৎকালীন কৃতবিদ্য লোকমাত্রেই সমাদরপূর্বক সর্ব্ব-শুভকরী পত্রিকা