পাতা:বিপ্লবী কানাইলাল - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বন্ধু মতিলাল, অগ্রজ আশুতোষ ও কয়েকজন আত্মীয় শবদেহ নিতে এসেছিলেন। একজন শেতাঙ্গ কর্মচারী তাঁদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে ইঙ্গিতে একটা ঘর দেখিয়ে দিলে। ছোট একখানা ঘর, তারই একপাশে কালো কম্বলে ঢাকা কানাইলালের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। সেই বীরদেহ বুকে ধরে তাঁরা বাইরে নিয়ে এলেন। কম্বল খুলতে সাহস হল না। সবার চোখ জলে ঝাপসা হয়ে গেছে। হঠাৎ শ্বেতাঙ্গ কর্মচারীটি বলে উঠল, আপনারা কাঁদছেন কেন? এরকম বীর যে দেশে জন্মেছে, সে দেশ ধন্য। জন্মালে ত মরতেই হয়, এমন মরা কয়জন মরতে পারে? ওঁরা সকলে অবাক হয়ে চেয়ে দেখলেন সেই বিদেশীর চোখেও জলধারা বাধা মানে নি। সে আবার বললে, আমি একজন কারারক্ষী। কানাইলালের সঙ্গে আমার অনেক কথা হত। ফাঁসির হুকুম হওয়ার পর ওর প্রফুল্লতা খুব বেড়ে গিয়েছিল। কাল সন্ধ্যায় ওর মুখে এমন মিষ্টি হাসি দেখেছি যা আমি জীবনে ভুলব না। আমি বরং বলেছিলুম, কানাই আজ হাসছ, কাল কিন্তু মরণের ছায়া তোমার হাসিভরা ঠোঁট ম্লান করে দেবে। আমার দুর্ভাগ্য যে কানাইর মৃত্যুর সময়েও আমাকে থাকতে হয়েছিল। চোখ ঢাকা দিয়ে সে যখন ধাপে ধাপে মঞ্চে উঠে গলায় ফাঁস লাগাতে যাচ্ছে ঠিক তখন আমার দিকে ফিরে আমার সাড়া নিলে। তারপর আগের মত হাসতে হাসতে প্রশ্ন করলে, মিষ্টার আমায় তুমি কেমন দেখছ? এমন বীরত্ব রক্তমাংসের শরীরে সম্ভব হয় না।

৮৯