পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S(r বিবিধ প্ৰবন্ধ প্রাচীনাগণ এই গুণে বিশেষ গুণশালিনী ছিলেন। নবীনাদিগের মধ্যে সে ধৰ্ম্ম একেবারে বিলুপ্ত হইতেছে। গৃহে অতিথি অভ্যাগত আসিলে প্ৰাচীনারা কৃতাৰ্থ হইতেন, নবীনাগণ বিরক্ত হয়েন। লোককে আহার করান প্ৰাচীনাদিগের প্রধান সুখ ছিল, নবীনগণ ইহাকে ঘোরতর বিপদ মনে করেন। ধৰ্ম্মে যে নবীনগণ প্ৰাচীনাদিগের অপেক্ষা নিকৃষ্ট, তাহার একটি বিশেষ কারণ অসম্পূর্ণ শিক্ষা। লেখা পড়া বা অন্য প্রকারের শিক্ষা তাহারা যাহা কিঞ্চিৎ প্রাপ্ত হয়েন, তাহাতেই বুঝিতে পারেন যে, প্রাচীন ধৰ্ম্মের শাসন অমূলক। অতএব তাহাতে বিশ্বাস হারাইয়া, ধৰ্ম্মের যে বন্ধন ছিল, তাহা হইতে বিমুক্ত হয়েন। তাহার স্থানে আর নূতন বন্ধন কিছুই গ্ৰন্থিাবদ্ধ হইতেছে না। আমরা লেখা পড়ার নিন্দা করিতেছি না। ধৰ্ম্ম ভিন্ন বিদ্যার অপেক্ষা মূল্যবান বস্তু যে পৃথিবীতে কিছুই নাই, ইহা আমরা ভুলিয়া যাইতেছি না। তবে বিদ্যার ফল, ইহা সৰ্ব্বত্র ঘটয়া থাকে যে, তাহাতে চক্ষু ফুটে, মিথ্যাকে মিথ্যা বলিয়া বোধ হয়, সত্যকে সত্য বলিয়া জানা যায়। বিদ্যার ফলে লোকে, প্ৰাচীন ধৰ্ম্মশাস্ত্ৰঘটিত ধৰ্ম্মের মূলের অলীকত্ব দেখিতে পায় ; প্রাকৃতিক যে সত্য ধৰ্ম্ম, তাহা সত্য বলিয়া চিনিতে পারে। অতএব বিদ্যায় ধৰ্ম্মের ক্ষতি নাই, বরং বৃদ্ধি আছে। সচরাচর পণ্ডিতে যাদৃশ ধৰ্ম্মিষ্ঠ, মুখে তােদৃশ পাপিষ্ঠ হয়। কিন্তু অল্প বিদ্যার দোষ এই যে, ধৰ্ম্মের মিথ্যা মূল তদ্বারা উচ্ছিন্ন হয় ; অথচ সত্য ধৰ্ম্মের প্রাকৃতিক মূল সংস্থাপিত হয় না। সেটুকু কিছু অধিক জ্ঞানের ফল। পরোপকার করিতে হইবে, এটি যথার্থ ধৰ্ম্মনীতি বটে। মুখেও ইহা জানে, এবং মূখদিগের মধ্যে ধৰ্ম্মে যাহাঁদের মতি আছে, তাহারাও ইহার বশবৰ্ত্তী হয়। তাহার কারণ এই যে, এই নৈতিক আজ্ঞা প্রচলিত ধৰ্ম্মশাস্ত্ৰে উক্ত হইয়াছে ; মুখের তাহাতে দৈবাজ্ঞ বলিয়া বিশ্বাস আছে । দৈববিধি লঙ্ঘন করিলে ইহলোকে ও পরলোকে ক্ষতিপ্রাপ্ত হইতে হইবে বলিয়া মূখ্য সে নীতির বশবৰ্ত্তী ; পণ্ডিতও সে নীতির বশবৰ্ত্ত, কিন্তু তিনি ধৰ্ম্মশাস্ত্রোক্ত বলিয়া। তদুক্তির অনুসরণ করেন না । তিনি জানেন যে, ধৰ্ম্মের কতকগুলি প্ৰাকৃতিক নিয়ম আছে, তাহ অবশ্য পালনীয় ; এবং পরোপকারবিধি সেই সকল নিয়মের ফল। অতএব এ স্থলে ধৰ্ম্মের ক্ষতি হইল না। কিন্তু যদি কেহ ঈদৃশ পরিমাণে মাত্র বিদ্যার আলোচনা করে যে, তদ্বিারা প্রাচীন ধৰ্ম্মশাস্ত্ৰে বিশ্বাস বিনষ্ট হয়, অথচ শত দূর বিদ্যার আলোচনায় প্রাকৃতিক ধৰ্ম্মে বিশ্বাস জন্মে, তত দূর না যায়, তবে তাহার পক্ষে ধৰ্ম্মের কোন মূল থাকে না। লোকনিন্দাভয়ই তাহাদিগের একমাত্ৰ ধৰ্ম্মবন্ধন হইয়া উঠে। সে বন্ধন অতি দুর্বল। আধুনিক অল্পশিক্ষিত যুবক যুবতীগণ কিয়দংশে এই অবস্থাপন্ন ; এ জন্য ধৰ্ম্মাংশে তাহারা প্ৰাচীন দিগের সমকক্ষ নহেন । যাহারা স্ত্রীশিক্ষায় ব্যতিব্যস্ত,