পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১০ বিবিধ সমালোচন। দেশের কপালে ছিল, যে জাতীয় জীবন কিঞ্চৎ পুনরুদীপ্ত হুইবে । সেই পুনরুদ্দীপ্ত জীবন বলুে, বঙ্গভূমে রঘুনাথ, ও চৈতন্যদেব অবতীর্ণ হইলেন। বিদ্যাপতি তাহাদিগের পূর্বগামী-পুনরুদীপ্ত জাতীয় জীবনের প্রথম শিখা। তিনি জয়দেব প্রণীত চিত্রখানি তুলিয়া লইলেন—তাহাতে নূতন রজ চালিলেন। জয়দেব অপেক্ষ বিদ্যাপতির দৃষ্টি তেজস্বিনী— তিনি শ্ৰীকৃষ্ণকে কিশোরবয়স্ক বিলাসরত নায়কই দেখিলেন বটে, কিন্তু জয়দেৰ কেৰল বাস্থ প্রকৃতি দেখিয়াছিলেন— বিদ্যাপতি অন্তঃপ্রকৃতি পৰ্য্যস্ত দেখিলেন । যাহা জয়দেবের চক্ষে কেবল ভোগকৃষ বলিয়া প্রকটত হইয়াছিল—বিদ্যাপতি তাহাতে অন্তঃপ্রকৃতির সম্বন্ধ দেখিলেন । জয়দেবের সরয় স্থখভোগের কাল, সমাজের দুঃখ ছিল না। বিদ্যাপতির সময় দুঃখের সময় । ধৰ্ম্ম লুপ্ত, বিধৰ্ম্মিগণ প্রভু, জাতীয় জীবন শিথিল, সবে মাত্র পুনরুদ্দীপ্ত হইতেছে—কবির চক্ষু ফুটিল । কবি, সেই দুঃখে, দুঃখ দেখিয়া, দুঃখের গান গাইলেন । আমরা বিদ্যাপতি ও জয়দেবে প্রভেদ সবিস্তারে দেখাইয়াছি; সেই সকল কথার পুনরুক্তির প্রয়োজন নাই। এস্থলে, কেবল ইহাই বক্তব্য,যে সাময়িক প্রভেদ, এই সকল প্রভেদের একটি কারণ। বিদ্যাপতির সময়ে, বঙ্গদেশে চৈতন্যদেব কৃত ধৰ্ম্মের নবাস্থ্যজয়ের, এবং রঘুনাথ কৃত দর্শনের নবাভু্যদয়ের পুর্বস্বচনা - হুইছেছিল; বিদ্যাপতির কাব্যে সেই নবাভু্যদয়ের স্বচনা লক্ষিত হয় । তখন বাহু ছাড়িয়া, আভ্যস্তরিকে বৃষ্টি পড়িয়াছে। সেই আঙ্ক্যস্তরিক দৃষ্টির ফল ধৰ্ম্ম ও দর্শন শাস্ত্রের উন্নতি ।