পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किन्नद्ग लठन ' ➢\gግ ঠাকুরমা বললেন, আর এমনিই যেন বাচবে । ছুদিন আগে আর দুদিন পাছে। তোর লজ্জা কয়ে না বোয়ের কথা বলতে আমার সামনে ? মুখের লাগাম আলগা করে দিয়েছ যে একেবারে এক কড়ার মুরোদ নেই, আবার কথাবাৰ্ত্ত শোন গুণধর ছেলের । সোজা কথা বলে দিচ্ছি, প্রাচিত্তির না হ’লে ওই রোগের মড়া কেউ বার করতে আসবে ঘর থেকে ? বাবা বললেন, চুপ চুপ, শুনতে পাবে ও ঘর থেকে। আচ্ছা মা, তোমার কি একটু দয়াও হয় না! ও মরণের ভয়ে কালি হয়ে যাচ্ছে, দুবেলা একে ওকে বলছে, আমি বঁচিব তো ? আর তুমি কি বলে ওর কানের কাছে— এর উত্তরে ঠাকুরমা চীৎকার করে বিপরীত কাও বাণিয়ে তুললেন। যাই হোক, বাবার কোনও কথা বোধ হয় খাটল না, কারণ একদিন মায়ের ঘরে কি সব পূজোআচ্চার যোগাড় হ'ল, পুরুতষ্ঠাকুর এলেন ওপাড়া থেকে। তিনি কালীর বাবা, আমি র্তাকে চিনি, কালী আমাদের সঙ্গে খিড়কী বাগানে কত খেলা করেছে, ভারি ছুটতে পারে, তার সঙ্গে ছুটে কেউ পারি না আমরা । সে এখন এখানে নেই, তার মামার বাড়িতে গিয়েছে। বড়পিসীমা বলছিলেন হরি গয়লানীর কাছে, সে আমাদের দুধ যোগান দেয় । —আহ, বলছি পুরুত আসছেন, তোমার একটা স্বস্ত্যেন করাতে হবে কিনা ; বউয়ের মুখ ভয়ে এতটুকু হয়ে গিয়েছে। বলছে, কেন ঠাকুরবি, তবে কি আমি বাচব না ? তখন আবার বোঝাই, বলি, তা কেন, স্বস্ত্যেন করলে তোমার অসুখ সারবে, ভয় কি ? আহ, ছেলেমানুষ, এই সবে বাইশ বছরে পা দিয়েছে ; ওর এখনও কত সাধ জীবনে, বাঁচবার কি ইচ্ছে পোড়াকপালীর । - দিন দশ-বারো পরের কথা । পাশেই এপাড়ায় সস্তুদের বাড়ি। সস্তুর দাদা বিয়ে করে নতুন বউ এনেছে। তাদের বাড়িতে সবাই গিয়েছে বউ দেখতে। খুব বাজি-বাজনা করে বিয়ে করতে গিয়েছিল সম্বর দাদা । এক-একটা হাউইবাজি যেন গিয়ে একেবারে আকাশে ঠেকে। বাড়ির সবাই গিয়েছে। দিদিমা যান নি, রাত জাগেন ব’লে তিনি ও-বারামদায় আঁচল পেতে ঘুমোচ্ছেন। আমি চুপিচুপি মায়ের ঘরে ঢুকে মায়ের কাছে গিয়ে বসলুম। মায়ের কাছে আসবার লোভেই বউ দেখতে যাই নি, বাগানে গিয়ে লুকিয়ে ছিলুম ; নইলে ছোটপিসীমা অনেক ডাকাডাকি করেছিল । মা বেশি কথা বলতে পারেন না। আমি চুপ করে মায়ের বিছানায় শিয়রের পাশটিতে বসে আছি। বেলা বেশি নেই। পুকুরধারের চাপা গাছে রোদ রাঙা হয়ে এসেছে। খানিকটা পরে মা বললেন, খোক, আমি যদি মরে যাই, তুই কি করবি ? আমি কিছু বললুম না, চুপ করে রইলুম। আমার মনে একটা অদ্ভূত ধরণের বিষাদ । আর কখনও এ ধরণের ভাব আমার মনে হয় নি । ভয়ানক মন-কেমন করছে কার জন্তে ; কার জন্তে যে বুঝতেও পারি না । মা যেন আপন মনেই বলছিলেন, খোক, তোকে যে কার কাছে রেখে যাৰ সেই হয়েছে আমার ভাবনা । কেই বা তোকে বুঝবে ! হঠাৎ মা তার হাতের আংটিটা খুলে আমার দিয়ে বললেন, যা, এটা লুকিয়ে রেখে দিগে যা, ওরা তোকে কিছু দেবে না। এটা দিয়ে কিছু মিষ্টিটিষ্ট কিনে খাস, তুই ভালবাসিল মেঠাই, তাই খাল। কাউকে দেখাল নি। -