পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किझन्न लढ़ी २०१ গেল। এ পাখানা উঠাইতে যায় তো ওখানা ডুবিয়া যায়। ক্লান্ত বুধী সে গভীর হাবড় হইতে নিজেকে কিছুতেই উদ্ধার করিতে পারিল না। জলও খাওয়া গেল না—তৃষ্ণায় ছাতি ফাটিয়া যাইতেছে অথচ দু’হাত দূরে টলটলে কালে জল। সে ক্রমশঃ পাকে পুতিয়া যাইতে লাগিল —শেষের দিকে বুধীর আর জ্ঞান রহিল নী—শকুনিতে তাহার চক্ষু দু'টি ক্রাইয়া বাহির করিয়া ফেলিবে, মুচিরা ছাল ছাড়াইয়া লইয়া যাইবে, হাড়গোড় সাদা হইয়া পড়িয়া থাকিবে জলের ধারে, হাড়-বোঝাই নৌকা একদিন কুড়াইয়া নৌকায় বোঝাই দিবে—মাংস খাইবে শিয়াল-শকুনিতেএ নিষ্ঠুর, অনতিদূর ভবিষ্যতের ছবি বুধীর চোখের সামনে কতবার সে কালরাত্রির অন্ধকারে ভাসিয়া উঠিল—কতবার মিলাইয়া গেল যে ! সকাল হইল, বেলা হইল। বুধীর তৃষ্ণাৰ্ত্ত আধ-অচেতন চক্ষু দুটি তখন নদীর কালো জলের দিকে চাহিয়া আছে একদৃষ্টে । একটু জল কেউ যদি দিত “ খররেদ্র চড়িল । উলুর ফুল ফুটিয়া আছে হাবড়ের ওপরকার চরে। দু'একটা গাঙশালিক বুধীর নিকটে আসিয়া বুধীর দিকে কৌতুহলের সঙ্গে চাহিয়া চাহিয়া দেখিল—কিছু বুঝিতে না পারিয়া চলিয়া গেল । কিছুক্ষণ বোধ হয় বুধীর ভাল জ্ঞান ছিল না। যখন তার চৈতন্ত আবার ফিরিয়া আসিল, তখন সে দেখিল, একখানা ছইওয়ালা নৌকা তাহার সামনে দিয়া চলিয়া যাইতেছে—এতক্ষণ পরে এই মানুষের চিহ্ন ! বুধী অতিকষ্টে আৰ্ত্তমুরে এক আবেদন পাঠাইল—ওগো আমাকে বঁাচাও—কে তোমরা— নৌকায় ছইয়ের বাহিরে একটি তরুণী বোঁ বসিয়াছিল—হঠাৎ তাহার চোখ পড়িল বুধীর দিকে। বৌটি ব্যস্তসমস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল—ওগো, বাইরে এসে-একবার এদিকে এসো— একটি লোক বাহিরে আসিয়া বলিল—কি— কি হয়েচে ? –ওগো, দ্যাথো একটা গরু হাবড়ে পড়েছে । আহা, কতক্ষণ হয়তো পড়ে আছে, উঠতে পাচ্চে নী— ওকে উঠিয়ে দিতে হবে। লোকটি তাচ্ছিল্যের সুরে বলিল—ও এই! আমি বলি কি না কি। ও কিছু না, যাদের গরু তারা এসে উঠিয়ে নিয়ে যাবে এখন। s বুধী বৌটির চোখে মুখে দয়া ও মনুষ্যত্ব দেখিতে পাইয়াছিল আগেই—সে মানুষ চেনে। বুধী আকুলনেত্ৰে আৰ্ত্ত আবেদনের দৃষ্টিতে বেটির দিকে চাহিল। বৌটি বলল-ওই স্থাখে। না কেমন করে চাইচে—ন, ওকে না তুলে দিয়ে যাওয়া হবে ন—এই চরে এখানে মানুষজন কোথায় যে ওকে তুলবে? নৌকার মাঝিরাও বলিল। এর নাম চাপাবেড়ের চর। এ তল্লাটে মনিস্কি নেই বাপু ! মা-ঠাকরুণ ঠিকই বলচেন। লোকটি বিরক্তি প্রকাশ করিল। নানা ওজর-আপত্তি তুলিল, কিন্তু বৌটি নাছোড়বান্দা। গরটাকে না তুলিয়া যাওয়া হইতেই পারে না। বলিল—স্থাখে, যাওয়া হচ্ছে একটা মঙ্গলের কাজে—গোড়াতেই একটা অমঙ্গল দিয়ে শুরু করা চলে ? এই বুড়ো গরুটার চোখের চাউনি আমি সারাদিন ভুলতে পারবো ন!—ও মরে যাবে এই হাবড়ে যদি কেউ না তোলে। . লোকটি বিরক্তিপূর্ণ মুরে বলিল—তোমায় নিয়ে বেরুলেই একটা না একটা হাঙ্গামা পোয়াতেই হবে এই ধরণের—এখন কোথায় লোকজন পাই যে গরু তুলি ! বঁাশ চাই, দড়ি চাই, লোক চাই—ও কি সোজা পুতে গিয়েচে, দেখচো না ? ঘণ্টাখানেক নৌকা সেখানে বাধা রহিল। নৌকার মাঝিরা নামিয়া কোথা হইতে জনকভক