পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী وألا মুখে প্রথম শুনবার সুযোগ হ’ল যে ওর নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা। সীতার সেবার যাওয়া হয়নি, ওকে সাত্বনা দেবার জন্তে বাবা বাজার থেকে ওর জন্তে রঙীন গার্টার, উল আর উল বুনবার কাট কিনে এনেছিলেন । এই কাঞ্চনজঙ্ঘার সম্পর্কে আমার একটা অদ্ভূত অভিজ্ঞতা আছে।. সেদিনটা আমাদের বাগানের কলকাতা আপিসের বড় সাহেব আসবেন বাগান দেখতে । র্তার নাম লিণ্টন সাহেব । বাবা ও ছোট সাহেব তাকে আনতে গিয়েচেন সোনাদা স্টেশনে —আমাদের বাগান থেকে প্রায় তিন-চার ঘণ্টার পথ । ঘোড়া ও কুলী সঙ্গে গিয়েছে। তখন মেমেরা পড়াতে আসত না, বিকেলে আমরা ভাইবোনে মিলে বাংলোর উঠোনে লাটু, খেলছিলাম। সুৰ্য্য অস্ত যাবার বেশী দেরি নেই—ম রান্নাঘরে কাপড় কাঁচবার জন্তে সোডা সাবান জলে ফোটাচ্ছিলেন, থাপা লণ্ঠন পরিষ্কার কাজে খুব ব্যস্ত—এমন সময় আমার হঠাৎ চোখে পড়ল কাঞ্চনজঙ্ঘার দূর শিখররাজির ওপর আর একটা বড় পৰ্ব্বত, স্পষ্ট দেখতে পেলাম তাদের ঢালুতে ছোট-বড় ঘরবাড়ি, সমস্ত ঢালুটা বনে ঢাকা, দেবমন্দিরের মত সরু সরু ঘরবাড়ির চুড়া ও গম্বুজগুলো অদ্ভুত রঙের আলোয় রঙীন—অস্তস্বৰ্য্যের মায়াময় আলো যা কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে পড়েছে তা নয়—তা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ও সম্পূর্ণ অপূৰ্ব্ব ধরনের। সে-দেশ ও ঘরবাড়ি যেন একটা বিস্তীর্ণ মহাসাগরের তীরে—কাঞ্চনজঙ্ঘার মাথার ওপর থেকে সে মহাসাগর কতদূর চলে গিয়েছে, আমাদের এদিকেও এসেছে, ভুটানের দিকে গিয়েছে। তার কুলকিনারা নেই ; যদি কাউকে দেখাতাম সে হয়তো বলত আকাশ ওই রকম দেখায়, আমায় বোকা বলত। কিন্তু আমি বেশ জানি যা দেখচি তা মেঘ নয়, আকাশ নয়—সে সত্যিই সমুদ্র। আমি সমুদ্র কখনো দেখিনি, তাই কি, সমুদ্র কি রকম তা আমি জানি। বাবার মুখে গল্প শুনে আমি যে রকম ধারণা করেছিলাম সমুদ্রের, কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরকার সমুদ্রট ঠিক সেই ধরনের। এর বছর দুই পরে মেমেরা আমাদের বাড়ি পড়াতে আসে, তারা দাদাকে একখান। ছবিওয়ালা ইংরেজী গল্পের বই দিয়েছিল, বইখানার নাম রবিনসন ক্রুশো—তাতে নীল সাগরের রঙীন ছবি দেখেই হঠাৎ আমার মনে পড়ে গেল, এ আমি দেখেছি, জানি—আরও ছেলেবেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘার মাথার ওপর এক সন্ধ্যায় এই ধরনের সমুদ্র আমি দেখেছিলাম—কুলকিনারা নেই, অপার-ভুটানের দিকে চলে গিয়েছে - মিস নর্টনকে এ-সব কথা বলবার আমার ইচ্ছে ছিল। অনেকদিন মিস নর্টন আমার কাছে ডেকে আদর করেছে, আমার কানের পাশের চুল তুলে দিয়ে আমার মুখ হু-হাতের তেলোর মধ্যে নিয়ে কত কি মিষ্টি কথা বলেছে, হয়তো অনেক সময়—তখন বুড়ী মেম ছাড়া ঘরের মধ্যে কেউ ছিল না—অনেকবার ভেবেছি এইবার বলব—কিন্তু বলি-বলি ক’রেও আমার সে গোপন কথা মিস নর্টনকে বলা হয়নি। কথা বলা তো দূরের কথা, আমি সে-সময়ে মিস নর্টনের মুখের দিকে লজ্জার চাইতে পারতাম না—আমার মুখ লাল হয়ে উঠত, কপাল ঘেমে উঠত “সারা শরীরের সঙ্গে জীবও যেন অবশ হয়ে থাকত.চেষ্টা করেও আমি মুখ দিয়ে কথা বার করতে পারতাম না। অথচ আমার মনে ছ’ত এবং এখনো মনে হয় যদি কেউ আমার কথা বোঝে, তবে মিস নর্টনই বুঝবে। মাস দুই আগে আমাদের বাড়িতে এক নেপালী সন্ন্যাসী এসেছিল। পচাং বাগানের বড়বাবু বাবার বন্ধু, তিনিই বাবার ঠিকানা দেওয়াতে সন্ন্যাসীটি সোনাদা স্টেশনে যাবার পথে আমাদের 帶 壽