পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ २११ রামহরি জীবনে কারে চাকুরি করেননি, এখন তিনি পঞ্চশ বছরে পদার্পণ করেচেন—মুতরাং এ বয়সে পরের দাসত্ব আর স্বীকার করবেন না এটা নিশ্চয় । কিন্তু মাছ ধরা সম্বন্ধে একজন "অথরিটি তিনি। বহু লোক এ বিষয়ে তার পরামর্শ নিতে আসে । - —হঁ্যা হোড়মশাই, গাঙে কি চার করে রাখবো আজ ? —কিসের চার দিচ্ছ ? —গোবর আর কেঁচো । —নতুন বর্ষার জল, তুষ আর কুঁড়ে দাও । র্তার অভিজ্ঞতা যথেষ্ট বিস্তৃত। কে র্তার কথার প্রতিবাদ করতে সাহস করবে ? হোড় মশায় জীবনে অনেক আশ্চৰ্য্য ধরনের বড় মাছ ধরেচেন, তার মুখে সে-সব গল্প শুনলে আহারনিদ্রা ভুলে যেতে হয়। অবিহি আমাদের মত ছেলেমানুষের সঙ্গে সে-সব গল্প তিনি কখনো করতেন না, বড় লোকেদের সঙ্গে বসে বলতেন, আমরা বসে শুনতাম । এ সব পচিশ বছর আগেকার কথা বলচি, আগেই বলে রাখি । আমার তখন বারো-তেরো বছর বয়েস। আষাঢ় মাস, খুব বর্ষা হয়ে গিয়েচে, মাঠে-ডোবায় জল থৈ-থৈ করচে । হাবুল বল্লে, মাছ ধরতে যাবি সস্তুদা ? জটেমারির খালে বড় বড় বান মাছ আর জিওল মাছ পড়চে । —কে বল্লে ? —কাল গোপাল আর নেড়াকাকা এই বড় বড় বান মাছ ধরে এনেচে । -- তোর বড় ছিপ আছে ? আমায় একখানা দিবি ? —দুখান মোটে আছে—বাকি তিনখানা পুটিমাছ ধরা ছিপ। বেলা তিনটের পর আমরা চারজন সমবয়সী বন্ধু জটেমারির খালে কাঠের পুলের নীচে মাছ ধরতে গিয়ে দেখি—রামহরি হোড় সেখানে তার লম্বা লম্বা ছিপগুলো নিয়ে দস্তুরমত চারকাঠি পুতে একমনে গম্ভীর মুখে একা বসে। সন্তু প্রশংসাসূচক বিস্ময়ের মুরে বল্লে—রামহরি জ্যাঠা মাছ ধরচে! আমি বল্লাম—কই ? —ঐ দ্যাথ, ঐ গাছের নীচে। আমার মাথায় এক দুষ্ট বুদ্ধি জাগলো। মন্ত-বড় বর্শেল রামহরি জ্যাঠা দস্তুরমত চারকাঠি পুতে মাছ ধরতে বসেচেন। যদি মাছ ধরতে হয়, তবে ওঁর আশেপাশে বসে। নয়তো মাছ হবে না। যে যে-সাধনায় সিদ্ধ তার শরণাপন্ন না হোলে সে-সাধনায় সিদ্ধিলাভ করা যায় না । আমি বল্লাম—চল, রামহরি জ্যাঠার ডাইনে ওই ফাকা জায়গাটায় ছিপ ফেলি । হাবুল বল্লে—উনি যদি বকেন ? —বকেন তো বকবেন, দেখছিস নে, ওঁর চারে বড় বড় মাছ সব আসতে শুরু করেচে ! আমন ওস্তাদ এ দেশে নেই। কি দিয়ে চার করতে হয়, কিসে বড় মাছ আসে, এ উনি যেমন জানেন, এমন কেউ জানে না । আমরা পাশে বসবার উদ্যোগ করচি, রামহরি বর্শেল কিন্তু সেট তত প্রীতির চক্ষে দেখলেন না। একটা কারণ হচ্চে, তিনি মাছ জড়ো করবার মশলা ছড়িয়েচেন জলে, এখন অন্ত কেউ এসে র্তার তৈরি জমিতে চাষ করুক, এটা তিনি পছন্দ করলেন না। দ্বিতীয়তঃ আমরা চঞ্চল