পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミbro বিভূতি-রচনাবলী গেল স্বতে কেটে, তাতে আমাদের অপরাধ কোথায় ? হাৰুল নীচু সুরে বল্লে—বা রে, উনি পচা স্বতো নিয়ে মাছ ধরতে এসেচেন, তাতে আমাদের দোষ বুঝ ? আমরা মাছকে শিখিয়ে দিইনি তো— যাহোক, রামহরি জ্যাঠা তো ছিপ গুটিয়ে চলে গেলেন । তারপরেই যে ঘটনাটি ঘটলে, আমাদের মত বালকের জীবনে সেরূপ ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। রামহরি জ্যাঠা চলে যাওয়ার মিনিট পনেরো পরে হঠাৎ আমার নজর গেল বী-দিকের শেওলা-দামের ধারে একটা সাদা শরের ফাতনা একবার ডুবচে একবার উঠচে । আমার কথায় হাবুলও সেদিকে চেয়ে দেখলে। ফাত নাট ক্রমেই যেন ডাঙার দিকে আসতে লাগলো—অথচ খালের স্রোত তো এখন উন্টোদিকে বইচে, তবে ফাত না ডাঙার ধারে আসচে কিসের জোরে ? হাবুল বল্লে—তাই তো সম্ভদ, ওটা কি হচ্চে ? হঠাৎ আমি জিনিসটা বুঝতে পারলাম। রামহরি জ্যাঠার সেই ছিপের ফাত না! বড় মাছ ওর তলায় বড়শিতে বেধে আছে। কথাটা যেমন মনে হওয়া, আমার সমস্ত শরীর দিয়ে যেন কিসের বীজ বেরিয়ে গেল ! ততক্ষণ সমস্ত ব্যাপারটা আমি বুঝতে পেরেচি। হাবুলকে বল্লাম—রামহরি জ্যাঠার সেই মাছটা! ও জখম হয়ে এসেচে বলে অবসন্ন হয়ে ডাঙার দিকে আসচে। জলে নামে। সবাই । হাবুল বল্লে—পচ, তুই ছেলেমানুষ আছিল, পরনের কাপড় খুলে ফেল, মাছটাকে কাপড় দিয়ে জাপটে ধরতে হবে । আমি বল্লাম—ভারী মাছ, খুব সাবধানে তুলবার চেষ্টা করে। জলের তলায় ওর কুমীরের মত শক্তি । সবাই মিলে জলে নামলাম। ফাতনা ধরে সন্তৰ্পণে টান দিতেই জলের তলায় প্রকাও মাছ ঝটপট কয়ে উঠে জল ছিটিয়ে আমাদের সারা গা ভিজিয়ে দিলে। আমাকে তো টেনেই নিয়ে গেল কিছুদূর—হাবুল আমার কোমর জড়িয়ে টেনে রাখলে। বল্লে—টান দিস নে, স্থতো ছিড়ে যাবে—মস্ত মাছ—সাবধানে তোল,। প্রায় মিনিট পনরো ধরে মাছটা যুঝল । যারা কখনো বড় মাছ ছিপে ধরেচে, তারাই জানে এ ব্যাপার কি ! এক-একবার এমন হোল যে, মাছ বুঝি আর থাকে না, চোর্চে ছুটলো বেশী জলের দিকে। তার চেয়েও ভয় ছিল ঘন কচুরিপানার দামের নীচে গিয়ে লুকুলে এ মাছের আর সন্ধান পাওয়া যাবে না। অবশেষে মাছটা ক্রমেই অবসন্ন হয়ে পড়তে লাগলো। মুখে আড়াই ইঞ্চি বড়শি নিয়ে কতক্ষণ পারবে ? মাছ অবসন্ন হোলে ক্রমশ: আপনিই ডাঙার কাছে আসে। পচা সেই সময় কাপড় দিয়ে মাছটা জাপটে ধরলো—আমরা সবাই গিয়ে পড়লাম মাছটার ওপরে। টেনে ডাঙায় তুলে দেখি, সের-পাচেক আন্দাজ ওজনের রুইমাছ। গ্রামে ঢুকবার পথেই রামহরি বশেলের ঘর। তথন সন্ধ্যার অন্ধকার হয়ে এসেচে, রামহরি জ্যাঠা দাওয়ায় বসে তামাক খাচ্ছেন। আমরা হৈ-হৈ করে আসচি দেখে তিনি জিগ্যেস করলেন —কি রে ? মাছ পেলি নাকি ? আমাদের উদ্দেশ্য ছিল তাই। রামহরি জ্যাঠার নাকের সামনে দিয়ে বড় মাছটা নিয়ে যাবে! দাওয়া থেকে নেমে এসে রামহরি বল্লেন, এত বড় মাছটা তোরা কোন ছিপে ধরলি ? তোদের সঙ্গে তো বড় ছিপ ছিল মা ! আমি বল্লাম—হরকওলা বড়শির একখানা ছিপ আছে—এই যে |