পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ৩৩৩ কত উদ্যোগ আয়োজন করি। এবার অন্য অন্ত দিক থেকে আমার ব্যাপার মন নয়, কিন্তু বা পাখানা হঠাৎ সেদিন বনগায়ে মুচকে গিয়ে এক রকম শয্যাগত হয়ে আছি—কোথাও দূরে বেড়াতে যাওয়া অসম্ভব । সেজন্য মন ভাল নয় । ভাল লাগে কি এ সময় কোথাও বাইরে যেতে না পারলে ? সবাই দুরে কোথাও যাবার পরামর্শ আয়োজন করচে, সজনী ও ব্রজেনদা আজ সন্ধ্যায় চলে গেল ভাগলপুরে। মুধীরবাবু কাল রাত্রের এক্সপ্রেসে যাচ্ছেন হরিদ্বার ও মুসৌরী, অপূৰ্ব্ববাবু আজ সকালে চলে গেছেন শিমূলতলা, নীরদ চৌধুরী গেছে রাচী, অশোক গুপ্ত যাচ্চে বেনারস, শচীন সরকার কাল সকালে চট্টগ্রাম যাবে, নীরদ দাশগুপ্ত তো সস্ত্রীক আগেই চলে গেছে চট্টগ্রাম—আজ সুধীরবাবুদের দোকানে দুপুরবেল বসে কেবলই শুনি ওদের টিকিট কেনার, বার্থ রিজার্ভ করার, হাওড়া স্টেশনের এনকোয়ারী আপিসে ফোন করার বিপুল ব্যস্ততা। হৈ-চৈএর মধ্যে ওরা নিজেদের ডুবিয়ে রেখেচে–কোথাও যাবে এ আমোদটা কোথাও গিয়ে পৌছানোর আমোদের চেয়ে বেশী—কিন্তু আমি শুধু বিষ্ণমূখে বসে বসেওদের আয়োজন দেখচি আর ভাবচি এবার আমার আর কোথাও যাওয়া হল না । সুপ্রভা লিখেছিল ৯ই তারিখে ওরা এখানে আসবে কাশী যাবার পথে—তাও সে চিঠি লিখেছে এবার তার যাওয়া হল না। আমার যাওয়ার মধ্যে দেখচি খালি মজিলপুরে দত্তদের বাড়ি সাহিত্য-সেবক সমিতির নিমন্ত্রণ আছে, তারা আমাকে বিশেষ করে ধরেচে যাওয়ার জন্তে—ঐ একমাত্র জায়গা যেখানে যাওয়া ঘটতে পারে, কারণ তারা মোটর পাঠাবে। হায়, হায়, কি বিভ্রাট এবার—শিলং গেল, চট্টগ্রাম-চন্দ্রনাথ গেল, কাশী গেল, হরিদ্বার গেল, মুসৌরীদেরাদুন গেল—শেষকাল কি না পূজোতে বেড়াতে যাব জয়নগর-মজিলপুর ? আরো না জানি অদৃষ্টে কি আছে! অথচ মজা এই সকলেই বলচে আমাদের সঙ্গে এস। সুধীরবাবু বলচেন, চলুন আমাদের সঙ্গে হরিদ্বার, নীরদ দাশগুপ্ত তে কাল স্টেশনে লোক পাঠাবে চট্টগ্রাম স্টেশনে—কারণ কাল সকালের ট্রেনে আমার সেখানে পৌছনোর কথা পূৰ্ব্ব ব্যবস্থাযত—অপূৰ্ব্ববাবু তো কাল কলেজ স্কোয়ারে সাধাসাধি—আমার সঙ্গে শিমুলতলা চলুন। সজনী বলচে—আমুন দু'দিনের জন্তেও ভাগলপুরে । এমন সময়েও পা ভাঙে মানুষের ? পূজোট এবার একেবারে মাটি হল। অগত্যা কাল দেশেই চলে যেতে হবে। কাল পর্য্যন্ত ভেবেছিলুম কোথাও যাওয়া হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পা অনেকটা সেরে উঠল। রাত্রিটা বসে বসে ভাবলুম কোথাও যাব না, এটা কি ঠিক ? চাটগাতেই যাওয়া যাক। সকালে উঠে স্টেশনে এসে দেখি চাটগায়ের একটা স্পেশাল ট্রেন ছাড়চে । শচীনবাবুও যাচ্চে সেটিতে। বেজায় ভিড় এমন কিছু নয়—তবে ভিড় দেখলুম স্টীমারে ও চাদপুর ট্রেনে বসে, শোওয়া তো দূরের কথা কাৎ হবার জায়গা নেই। তার ওপরে এক এক স্টেশনে গাড়ি দাড়ার আর ছাড়তে চায় না—বিষম বিরক্তির ব্যাপার। চাটগারে এসে নীরদবাবুর বাস খুজে না পেয়ে রেণুদের বাড়িতে এলুম। রেণুতো অপ্রত্যাশিতভাবে আমায় দেখে খুব খুশি । ওপরের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে তুললে। রেণুর দাদা এল মা এলেন। সবাই খুশি আমার দেখে। রেণু বাক্স থেকে কাপড় বের করে কুঁচিয়ে নীচে নিয়ে গেল স্বানের জায়গায়। স্নান করে খেয়ে ওদের সঙ্গে অনেকক্ষণ * নানা গল্প করি। ষোল বছর আগে এদের বাড়িতে এসেছিলুম—আর এই এখন ষোল বছর পরে। আজ চাটগায়ে বড় গরম, হাভন পার্কে আমি রেণুর দাদার সঙ্গে গিয়ে বসলুম