পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খারাপ কাজই করেচি | ---মুন্দর কবিতা । - কিংবা এ যদি কবিতা না হয় ; তবে কবিতা কি, তা আমার জানা নেই। যেখানে জীবন, যেখানে আনন, যেখানে প্রাণের প্রাচুর্ঘ্য ও নবীনতা–তাই Testament of Beauty—ofol একদিন বিকেলের দিকে মেঘের সৌন্দৰ্য্য ভারী চমৎকার ফুটুচে সুৰ্য্য অস্ত যাবার সময়ে। পচা রায় মাছ ধরতে বসেচে কুঠার নীচে—তার ওখানে গিয়ে বসে গল্প করি। আর এপার ওপারের শুামল সৌন্দর্য্যের দিকে চেয়ে দেখি—কয়টি উলুবন, খেজুর গাছ, পটল ক্ষেত, ঝিঙের ক্ষেত, শান্ত কালো নদীজল, কঁাটাশেওলার দাম, নলে জেলের ডিঙি নৌকা—ওপরে নীল আকাশ, রাঙা মেঘ—সব সুদ্ধ মিলিয়ে চমৎকার ছবি । আজ দিনটা বেশ চমৎকার। সারা ছুটির মধ্যে এমন পরিষ্কার দিন আসে নি। বল্লার ভাঙনের কাছে একটা চারা শিমুল গাছ আছে, তার চারিপাশে সবুজ কচি ঘাস বন, নিকটে উলুখড়ের রাশি রাশি ফুল ফুটেচে, ঝলমলে রোদ, নীল আকাশ। রৌদ্রে ঘাসের ওপর শুয়ে থাকতে বেশ মজা । স্বান করে এসে বসেচি, খুকু এসে অনেক গল্পগুজব করলে। বিকেলে কি চমৎকার রোদ ! এমন রোদ এবার সারা জ্যৈষ্ঠ মাসে দেখিনি। পচা রায় মাছ ধরতে গেল । কুঠার নীচেই জলের ধারে ঘন বন, তার মধ্যে ঢুকে খানিকটা বসি। এমন ঘন বন যে এদিকে আছে তা জানা ছিল না আমার। জলের ধারে কতক্ষণ বসে গল্প করি পচার সঙ্গে। আকাশের বড় বড় মেঘস্তুপ ক্রমে রাঙা হয়ে এল বেলা পড়লে। আমি উঠে মাঠের মধ্যে বেড়াতে গেলুম। এদিকের মাঠ ওদিকের চেয়ে অনেক ভালো। কুঠার নীচে সেই জলাটার চারিপাশের দৃপ্ত বড় সুন্দর। আমাদের ঘাটের ওপরে ডাক্তারদের কলাবাগানে একদল গোয়ালা গরু চরাতে এসে রান্নাবাড়া করচে। তাদের কাছে বসে খানিকটা গল্প করলুম। ওদের বাড়ি ঝিকরগাছার কাছে। ও-দেশ জলে ডুবে গিয়েচে বলে এখানে গরু চরাতে এসেচে। w আজ আকাশের রং অদ্ভুত রকমের নীল, এমন নীল রং সেই আর বছর আষাঢ় মাসের পরে আর কখনো দেখিনি, বৃষ্টি-ধৌত আকাশ না হলে এমন নীল রং বুঝি ফোটে না। মদের নেশার মত কেমন নেশা লাগিয়ে দিল এই আকাশের নীল রংটা । রোদের রং হয়েচে অদ্ভুত—প্রখর সাদা নয়, যেন হলদে ধরনের। গাছপালা ঘাসের রং যেন হয়েচে হলদে। আমাদের ঘাটে নাইতে যাবার আগে মাঠে বেড়াতে গিয়ে দূরের বাশবন, কাদি কাদি খেজুর ঝোলানো খেজুর গাছ, অন্তান্ত গাছগুলোর রৌদ্রালোকিত পত্রপুঞ্জের দিকে চেয়ে চোখ আর ফেরাতে পারিনে। আমাদের ঘাটের ধারে ফুলভত্তি বাবলা গাছ, সাদা-ডানা প্রজাপতি উড়চে—সে দৃশুটা মনে অপূৰ্ব্ব ভাব নিয়ে এল। এই নীল আকাশ থাকৰে আরও ষাট বছর পরে, এই বনসিমতলার ঘাট থাকবে তখনও, ওপারের চরে এমনি উলুর ফুল ফুটবে, এমনি সাইবাবলার পত্রশীর্ষ বৃষ্টিধোরা নীল আকাশের তলে স্বর্ঘ্যের আলোর দিকে খাড়া হয়ে রইবে, কত অনাগত তরুণী বধূরা জলসিক্ত পদচিহ্ন অঙ্কিত করে ঘাটের পথে যাওয়া আসা করবে। আমি তখন আর থাকব না এ গ্রামে জানি-তবুও আমার কথা গায়ের এমনি আষাঢ় দিনের হাওয়ায়, নিৰ্ম্মল নীল আকাশের আনন্দের মধ্যে অদৃশু অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে, সেই দূর ভবিষ্কৃতের কথা মনে হয়ে