পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ባ» ঠেস্ দিয়ে কথাটা বললেন। তারপর আধঘণ্টা তিনি ঘরে দাড়িয়ে রইলেন—আমি ও দৈতারী র্তার সামনে সমস্ত ছবিগুলো একে একে পেড়ে পরিষ্কার করলাম। সাহস ক’রে যেন মাখা তুলে ཟླ།ཨོཾ་ পারলাম না, যেন আমি নিজেই ছবির তদারক না ক’রে প্রকাও অপরাধ করে ফেলোচ । সেইদিন প্রথম বুঝলাম আমার মত সামান্ত মাইনের লোকের কি খাতির—আর কি মান এদের কাছে। সীতার বিয়ের একটা বন্দোবস্ত করতে পারি তবে আবার পড়বো । ছোট বৌঠাকুরুনের কথা এই সময় মনে হ’ল—শৈলদির কথাও মনে পড়ল। কত ধরনের মাহুষই আছে সংসারে! অমরনাথবাবুর বৈঠকখানা আমাদের ঘরের সামনে। খুব শৌধীন জিনিসপত্র সাজানো এবং প্রত্যেক দিনই কোন-না-কোন শৌর্থীন জিনিস কেন লেগেই আছে। সেঘরে রোজ সন্ধ্যার পর বন্ধুবান্ধবেরা এসে গানের আড্ডা বসায়—কেউ ভুগি-তবলা; কেউ হারমোনিয়ম বাজায়—গান-বাজনায় অমরবাবুর খুব বেীক। সে-দিন আড়াইশো টাকার একটা গানের যন্ত্র রাখবার কাচের আলমারি কেনা হ’ল । তিনি কলেজের ছাত্র বটে, কিন্তু অামি পড়াশুনা করতে একদিনও দেখিনি তাকে । একদিন বেলা দশটার সময় অমরনাথবাবু ঘরে ঢুকে বললেন—ওহে, পাচটা টাকা দাও তো, আছে তোমার কাছে? আমি প্রথমটা অবাক হয়ে গেলাম। আমার কাছে টাকা চাইতে এসেচেন ছোটবাবু! ব্যস্তভাবে আমার বাক্সট খুলে টাকা বার করে সসন্ত্রমে তার হাতে দিলাম। দিনকতক কেটে গেল, আর একদিন তিনটে টাকা চাইলেন । মাইনের টাকা সব এখনও পাইনি—দশটা টাকা মোটে পেয়েছিলাম—তা থেকে দিয়ে দিলুম আট টাকা। দু-তিন মাসে ছোটবাবু আমার কাছে পচিশ টাকা নিলেন—বাড়ির ও আমার হাতখরচ বাদে যা-কিছু বাড়তি ছিল, সবই র্তার হাতে তুলে দিলাম। একদিন দাদা চিঠি লিখলে—তার বিশেষ দরকার। পনেরটা টাকা যেন আমি পাঠিয়ে দিই। আমার হাতে তখন মোটেই টাকা নেই। ভাবলুম, ছোটবাবুর টাকাটা তো দেওয়ার কথা এতদিনে—দিচ্চেন না কেন ! বড়মামুষের ছেলে, সামান্ত টাকা খুচরো কিছু কিছু ক'রে নেওয়া, সে ওর মনেই নেই বোধ হয় । লজ্জায় চাইতেও পারলাম না। অগত্যা বারোটা টাকা আগাম পাওয়ার জন্তে একটা দরখাস্ত করলুম। সে-দিন আপিসে আবার বসেচেন মেজবাবু। দরখাস্ত পড়ে আমার দিকে চেয়ে বললেন—কি হবে তোমার আগামটাকা? মেজবাবুকে আমার বড় ভয় হয়। বললুম—দাদা চেয়ে পাঠিয়েচেন, হাতে আমার কিছু নেই তাই । * মেজবাবু বললেন—তুমি কতদিন সেরেস্তায় কাজ করচ ? চার মাস মোটে ? না, এত কম দিনের লোককে এ্যাডভান্স দেওয়া স্টেটের নিয়ম নেই—ত ছাড়া তুমি তো এখনও পাকা বহাল হওনি—এখনও প্রোবেশনে আছ । কই, চাকুরিতে ঢোকবার সময় সে-কথা তো কেউ বলেনি যে আমি প্রোবেশনে বাহাল হচ্চি বা কিছু। যাই হোকু দরখাস্ত ফিরিয়ে নিয়ে এলাম ; দাদাকে টাকা পাঠানো হ’লই না, এদিকে ছোটবাবুও টাকা দিলেন না, ভুলেই গিয়েচেন দেখচি সে-কথা। প্রথমে আসবার সময় ভেবেছিলাম এরা কোন দেবস্থানের সেবায়েত, সাধু মোহান্ত মানুষ হবেন—ধর্মের একটা দিক এদের কাছে জানা যাবে—কিন্তু এরা ঘোর বিলাসী ও বিষয়ী, এখন তা বুঝচি । মেজবাবু এই চার মাসের মধ্যে এটর্নির বাড়ি পাঠিয়েচেন আমার যে কতদিন, কোথায় জমি নিয়ে ইম্প্রভমেণ্ট ট্রাস্টের সঙ্গে প্রকাও মোকদ্দমা চলচে–এ বাদে কুঞ্জ নায়েব তো প্রায়ই দেশ