পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক وج ه لا রাঙা আভা পড়িয়াছে, একটা অবর্ণনীয় শান্তি ও নীরবতা বিশাল বইহার জুড়িয়া । মন্ধীর কথার উত্তর দিতে বোধ হয় একটু দেরি হইল। সে আবার কি একটা প্রশ্ন করিল, কিন্তু ওর ছিকাছিকি’ বুলি আমি খুব ভাল বুঝি না, কি বলিল না বুঝিতে পারিয়া অন্ত একটা প্রশ্ন দ্বার। সেটা চাপা দিবার জন্ত বলিলাম—তোমরা কালই যাবে ? —হ্যা, বাবুজী । —কোথায় যাবে ? —পূর্ণিয়া কিষণগঞ্জ অঞ্চলে যাব। পরে বলিল—নাচ-তামাশা কেমন দেখলেন বাৰু? বেশ ভাল ভাল লোক গাইয়ে এবার এসেছিল। একদিন কল্পটোলায় বড় বকাইন গাছের তলায় একটা লোক মুখে ঢোলক বাজিয়েছিল, শুনেছিলেন ? কি চমৎকার বাবুজী ! দেখিলাম মঞ্চী নিতান্ত বালিকার মতই নাচ-তামাশার আমোদ পায় । এবার কত রকম কি দেখিয়াছে, মহা উৎসাহ ও খুশির .রে তাহারই বর্ণনা করিতে বসিয়া গেল। নকৃছেদী বলিল—নে নে, বাবুজী কলকাতায় থাকেন, তোর চেয়ে অনেক কিছু দেখেছেন। ও এ-সব বড় ভালবাসে বাবুজী, ওরই জন্তে আমরা এতদিন এখানে রয়ে গেলাম। ও বল্লে—ন, দাড়াও, থামারের নাচ-তামাশা, লোকজন দেখে তবে যাব। বডড ছেলেমাস্থ্য এখনও ! মঞ্চী যে নকৃছেদীর কে হয় তাহা এতদিন জিজ্ঞাসা করি নাই, যদিও ভাবিতাম” বৃদ্ধের মেয়েই হইবে । আজ ওর কথায় আমার আর কোন সন্দেহ রহিল না। বলিলাম—তোমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছ কোথায় ? নকছেদী আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিল-আমার মেয়ে ! কোথায় আমার মেয়ে হুজুর ? —কেন, এই মঞ্চী তোমার মেয়ে নয় ? আমার কথায় সকলের আগে খিল খল করিয়া হাসিয়া উঠিল মঞ্চ। নক্ছেদীর প্রৌঢ়া স্ত্রীও মুখে আঁচল চাপা দিয়া খুপড়ির ভিতর ঢুকিল। নকৃছেদী অপমানিত হওয়ার মুরে বলিল—মেয়ে কি হুজুর! ও যে আমার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। বলিলাম—ও ! অতঃপর খানিকক্ষণ সবাই চুপচাপ । আমি তো এমন অপ্রতিভ হইয়া পড়িলাম যে, কথা খুজিয়া পাই না। মঞ্চী বলিল—আগুন করে দিই, বডড শীত । শীত সত্যই বড় বেশী। স্বৰ্য্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন হিমালয় পাহাড় নামিয়া আসে। পূৰ্ব্ব-আকাশের নীচের দিকটা স্বৰ্য্যান্তের আভার রাঙা, উপরটা কৃষ্ণাভ নীল। খুপড়ি হইতে কিছু দূরে একটা শুকনে কাশ-ঝাড়ে মক্কী আগুন লাগাইয়া দিতে দশ-বারো ফুট দীর্ঘ ঘাস দাউ দাউ করিয়াজলিয়া উঠিল। আমরা জলন্ত কাশঝোপের কাছে গিয়া বসিলাম