পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ8e বিভূতি-রচনাবলী কাওই আসিয়া দেখিবে! তাহার মুখের ভাবে মনে হইল সে বেশ একটু নিরাশ হইয়াছে। এ রাজবাড়ী আপেক্ষ টেলিগুহ যে অনেক ভাল । রাজু তো মনের কথা চাপিতে না পারিয়া স্পষ্টই বলিল—রাজা কোথায় হুজুর, এ তো এক সাঁওতাল-সর্দার! আমার যে ক'টা মহিষ আছে, রাজার শুনলাম তাও নেই, হুজুর ! সে ইহারই মধ্যে রাজার পার্থিব সম্পদের বিষয় অনুসন্ধান করিয়াছে—গরু, মহিষ এদেশে সম্পদের বড় মাপকাঠি। যার যত মহিষ, সে তত বড়লোক । গভীর-রাত্রে চতুর্দশীর জ্যোৎস্না বনের বড় বড় গাছপালার আড়ালে উঠিয়া যখন সেই বস্ত গ্রামের গৃহস্থবাড়ীর প্রাঙ্গণে আলো-আঁধারের জাল বুনিয়াছে, তখন শুনিলাম রাজবাড়ীতে বহু নারীকন্ঠের সম্বিলিত এক অদ্ভুত ধরনের গান। কুলি ফুলন পূর্ণিমা, রাজবাড়ীতে নবাগত কুটুম্বিনী ও রাজকন্যার সহচরীগণ কল্যকার নাচগানের মহলা দিতেছে। সারারাত ধরিয়া তাহাঁদের গান ও মাদল বাজনা থামিল না । শুনিতে শুনিতে কখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছি, ঘুমের মধ্যেও ওদের সেই গান কতবার যেন শুনিতে পাইতেছিলাম। NV কিন্তু পরদিন ঝুলনোৎসব দেখিয়া মটুকনাথ, রাজু, এমন কি মুনেশ্বর সিং পর্য্যন্ত মুগ্ধ হইয়া গেল । পরদিন সকালে উঠিয়া দেখি ভানুমতীর বয়সী কুমারী মেয়েই অন্ততঃ ত্রিশজন চারি পাশের বহু টোলা ও পাহাড়ী বস্তি হইতে উৎসব উপলক্ষে আসিয়া জুটিয়াছে। একটি ভাল প্রথা দেখিলাম, এত নাচগানের মধ্যে ইহাদের কেহই মহুয়ার মদ খায় নাই। রাজা দেবিরুকে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি হাসিয়া গর্বের সুরে বলিলেন—আমাদের বংশে মেয়েদের মধ্যে ও নিয়ম নেই। তা ছাড়া, আমি হুকুম না দিলে, কারো সাধ্যি নেই আমার ছেলেমেয়ের সামনে মদ খায় । মটুকনাথ দুপুর বেলা আমার চুপি চুপি বলিল-রাজা দেখছি আমার চেয়ে গরীব। রাধবার জন্তে দিয়েছে মোট রাঙা চাল, আর পাক চালকুমড়ো, আর বুনে ধুধুল। এতগুলো লোকের জন্তে কি রাধি বলুন তো ? সারা সকাল ভানুমতীর দেখা পাই নাই-খাইতে বসিয়াছি, সে এক বাটি দুধ আনিয়া আমার সামনে বসিল । বলিলাম—তোমাদের গান কাল রাত্রে বেশ লেগেছিল । ভানুমতী হাসিমুখে বলিল-আমাদের গান বুঝতে পারেন ? বলিলাম—কেন পারব না ? এতদিন তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমাদের গান বুঝব না কেন ?