পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী وال ۹ ذT প্রেমের মান রাখিয়াছে কুন্ত । কুন্তা কথাটি ঠিক শুনিয়াছে কিনা যেন বুঝিতে পারিল না। বিস্মিত মুখে বলিল—জমি, —ই, জমি। নূতন বিলি জমি ! কুন্তা একটুখানি কি ভাবিল। পরে বলিল—আগে ত আমাদেরই কত জোতজমা ছিল। প্রথম প্রথম এসে দেখেছি। তার পর সব গেল একে একে। এখন আর কি দিয়ে জমি নেব, হুজুর ? —কেন, সেলামীর টাকা দিতে পারবে না ? —কোথা থেকে দেব ? রাত্তির করে ক্ষেত থেকে ফসল কুড়োই পাছে দিনমানে কেউ অপমান করে। আধ টুক্‌রি এক টুকরি কলাই পাই—তাই গুডো করে ছাতু করে বাচ্ছাদের খাওয়াই। নিজে খেতে সব দিন কুলোয় না— কুন্তী কথা বন্ধ করিয়া চোখ নীচু করিল। দুই চোখ বাহিয়া টল্‌ টল্‌ করিয়া জল গড়াইয়া পড়িল । আসরফি সরিয়া গেল। ছোকরার হৃদয় কোমল, এখনও পরের দুঃখ ভাল রকম সহ করিতে পারে না । আমি বলিলাম—কুন্তা, আচ্ছা ধর যদি সেলামী না লাগে ? কুন্তা চোখ তুলিয়া জলভরা বিস্মিত চোখে আমার মুখের দিকে চাহিল। আসরফি তাড়াতাড়ি কাছে আসিয়া কুন্তার সামনে হাত নাডিয়া বলিল—হুজুর তোমায় এমনি জমি দেবেন, এমনি জমি দেবেন—বুঝলে না দাইজী ? আসরফিকে বলিলাম—ওকে জমি দিলে ও চাষ করবে কি করে আসরফি ? আসরফি বলিল—সে বেশী কঠিন কথা নয় হুজুর। ওকে দু-একখানা লাঙল দয়া করে সবাই ভিক্ষে দেবে। এত ঘর গাঙ্গোত প্রজা, একখানা লাঙল ঘর-পিছু দিলেই ওর জমি চাষ হয়ে যাবে। আমি সে-ভার নেব, হুজুর। —আচ্ছা, কত বিঘে হ’লে ওর হয়, আসরফি ? —দিচ্ছেন যখন মেহেরবানি ক’রে হুজুর, দশ বিঘে দিন। কুস্তাকে জিজ্ঞাসা করিলাম— কুস্তা, কেমন, দশ বিঘে জমি যদি তোমায় বিনা সেলামীতে দেওয়া যায়—তুমি ঠিকমত চাষ করে ফসল তুলে কাছারির খাজনা শোধ করতে পারবে ত ? অবিপ্তি প্রথম দু-বছর তোমার খাজনা মাপ। তৃতীয় বছর থেকে খাজনা দিতে হবে। কুন্ত যেন হতবুদ্ধি হইয়া পড়িয়াছে। আমরা তাহাকে লইয়া ঠাট্টা করিতেছি, না সত্য কথা বলিতেছি—ইহাই যেন এখনও সমৃঝাইয়া উঠিতে পারে নাই। কতকটা দিশহারাভাবে বলিল—জমি ! দশ বিঘে জমি ! আসরফি আমার হইরা বলিল-ই—হুজুর তোমার দিচ্ছেন। খাজনা এখন দু-বছর