পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক Xbo©. সঙ্গে দেখা হয়েছিল—মনে নেই ? কোন ভয় নেই –কি হয়েছে তোমার ? গিরধারীলাল ঝর ঝর করিয়া কাদিয়া কেলিল। হাত ও পা নাড়িয়া দেখাইয়া বলিল— হুজুর, কেটে গিয়ে ঘা হয়। কিছুতেই সে ঘা সারে না, যে যা বলে তাই করি—ঘা ক্রমেই বাড়ে । ক্রমে সকলে বললে—তোর কুষ্ঠ হয়েছে। সেইজন্ত আজ চার-পাচ মাস এই রকম কষ্ট পাচ্ছি। বস্তির মধ্যে ঢুকতে দেয় না! ভিক্ষে করে কোন রকমে চালাই। রাত্রে কোথাও জায়গা দেয় ন—তাই বনের মধ্যে ঢুকে শুয়ে থাকব বলে— — কোথায় যাচ্ছিলে এদিকে ? এখানে কি করে এলে ? গিরধারীলাল এরই মধ্যে হাপাইয়া পড়িয়াছিল। একটু দম লইয়া বলিল—পূর্ণিয়ার হাসপাতালে যাচ্ছিলাম হুজুর—নইলে ঘা তো সারে না । আশ্চৰ্য্য না হইয়া পারিলাম না। মানুষের কি আগ্রহ বাচিবার । গিরধারীলাল যেখানে থাকে, পূর্ণিয় সেখান হইতে চল্লিশ মাইলের কম নয়—মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের মত শ্বাপদসঙ্কুল আরণ্যভূমি সামনে—ক্ষতে-অবশ হাত-পা লইয়া সে চলিয়াছে এই দুর্গম পাহাড়জঙ্গলের পথ ভাঙিয়া পূর্ণিয়ার হাসপাতালে! চারপাই আসিল । সিপাহীদের বাসার কাছে একটা খালি ঘরে উহাকে লইয়া গিয়া শোয়াইয়া দিলাম। সিপাহীরাও কুষ্ঠ বলিয়া একটু আপত্তি তুলিয়াছিল, পরে বুঝাইয়া দিতে তাহারা বুঝিল । গিরধারীকে খুব ক্ষুধাৰ্ত্ত বলিয়া মনে হইল। অনেকদিন সে যেন পেট ভরিয়া খাইতে পায় নাই। কিছু গরম দুধ খাওয়াইয়া দিতে সে কিঞ্চিত সুস্থ হইল। সন্ধ্যার দিকে তাহার ঘরে গিয়া দেখি সে অঘোরে ঘুমাইতেছে। পরদিন স্থানীয় নিশিষ্ট চিকিৎসক রাজু পাড়েকে ডাকাইলাম। রাজু গম্ভীর মুখে অনেকক্ষণ ধরিয়া রোগীর নাড়ী দেখিল, ঘা দেখিল । রাজুকে বলিলাম—দেখ, তোমার দ্বারা হবে, না পূর্ণিয়ায় পাঠিয়ে দেব ? রাজু আহত অভিমানের মুরে বলিল—আপনার বাপ-মায়ের আশীৰ্ব্বাদে হুজুর, অনেক দিন এই কাজ করছি। পনের দিনের মধ্যে ঘা ভাল হয়ে যাবে। গিরধারীকে হাসপাতালে পাঠাইয়া দিলেই ভাল করিতাম পরে বুঝিলাম। ঘায়ের জন্ত নহে, রাজু পাড়ের জড়ি-লুটির গুণে পাচ-ছয় দিনের মধ্যেই ঘায়ের চেহারা বদলাইয়া গেল—কিন্তু মুশকিল বাধিল তাহার সেবা-শুশ্ৰষ লইয়া। তাহাকে কেহ ছুইতে চায় না, ঘারে ঔষধ লাগাইয়া দিতে চায় না, তাহার খাওয়া জলের ঘাটটা পৰ্য্যস্ত মাজিতে আপত্তি করে। তাহার উপর বেচারীর হইল জর । খুব বেশী জর । পিা হইয়া কুন্তাকে ডাকাইলাম। তাহাকে বলিলাম—তুমি বস্তি থেকে একজন গাঙ্গেীতার মেয়ে ডেকে দাও, পয়সা দেব—ওকে দেখাশুনো করতে হবে। কুন্তু কিছুমাত্র না ভাবিয়া তখনই বলিল—আমি করব বাবুজী। পয়সা দিতে হবে না। কুস্তা রাজপুতের স্ত্রী, সে গাঙ্গোত রোগীর সেবা করিবে কি করিয়া ? ভাবিলাম আমার